টিএইচওসহ চিকিৎসকরা ছুটিতে
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার দৈন্যদশা দীর্ঘদিনের। এখানকার চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগী বা তাদের স্বজনদের হতাশা বহু পুরোনো। বড় প্রত্যাশা নিয়ে দূরদুরন্ত থেকে রোগীরা এখানে আসলেও অনেকেই ফেরেন নামমাত্র সেবা নিয়ে। আবার কেউবা ফেরেন খালি হাতে। ডাক্তার আছেনতো ওষুধ নেই, ওষুধ আছে তো ডাক্তার নেই দোলাচলে যখন হাসপাতাল, ঠিক তখনই মেডিকেল অফিসার শূন্য হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশী রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে। গত শনিবার থেকে হাসপাতালের টিএইচও শুভ্রারানী দেবনাথসহ তিনজন মেডিকেল অফিসার দুর্গাপূজার ছুটিতে রয়েছেন। ফলে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা।
রোববার (৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১০ টায় সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। বেলা ১১টার মধ্যে প্রায় ৩০০ রোগী কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। এসময় বহিঃবিভাগে কোন মেডিকেল অফিসারকে পাওয়া যায়নি। তাদের কক্ষে বসে রোগী দেখছেন আটজন উপ-সহকারী।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বহিঃবিভাগে এক নম্বর কক্ষে ছিলেন সোহানুর রহমান ও সুমন আলী, চার নম্বর কক্ষে ফারুখ হোসেন, ছয় নম্বর কক্ষে আনিছুর রহমান ও জিএম মাসুদ, দশ নম্বর কক্ষে আলেক উদ্দিন এবং ১৩ নম্বর কক্ষে আফসানা ফেরদৌস ও শিউলিআরা, তিন নম্বর কক্ষে দন্ত বিভাগে রোগী দেখছেন আব্দুর রউফ। আর জরুরি বিভাগ সামলাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত টিএইচও জেসমিন সুমাইয়া এবং উপ-সহকারী ডিএম তহিদুল হাসান।
এসময় কথা হয় উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা ফয়েজ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, টিকিট নিয়ে দশ নম্বর কক্ষে গিয়েছি। সেখানে যিনি রোগী দেখছেন তিনি বলেছেন, সামনের বুধবারে এসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে। একই অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের।
দেবিদাসপুর গ্রামের মিলন হোসেন নামে এক যুবক জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও রাত দশটা পর্যন্ত কোন ডাক্তার পাননি তিনি। তিনি বলেন, দায়িত্বরত নার্সদের কাছে ডাক্তারের ব্যাপারে জানতে চেয়েছি। তারা বলেছেন, ডাক্তার ইচ্ছেমত রাউন্ডে আসবেন।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলেক উদ্দিন বলেন, আমাদের ডিউটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু মেডিকেল অফিসার কম থাকায় আমরা হাসপাতালে রোগী দেখছি।
ভারপ্রাপ্ত টিএইচও জেসমিন সুমাইয়া জানান, টিএইচও ডাক্তার শুভ্রারানী দেবনাথ, ডাক্তার অনুপ বসু ও দন্ত চিকিৎসক দিপঙ্কর দে পূজার জন্য শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিনের ছুটিতে রয়েছেন। আমি দিনে ডিউটি করছি। রাতে ডাক্তার নজরুল ইসলাম আসবেন। তবে ডাক্তার আশরাফুর রহমান সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
জানতে চাইলে মুঠোফোনে টিএইচও ডাক্তার শুভ্ররানী দেবনাথ বলেন, হাসপাতালে ২৬টি মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। তারমধ্যে আমিসহ অনুপবসু ও দিপঙ্কর দে ছুটিতে আছেন। আর ডাক্তার আশরাফ সিভিল সার্জন অফিসে কাজ করছেন। বুধবার থেকে আবার সবাই ডিউটিতে যোগ দেবেন। চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায় হাসপাতাল সামাল দেওয়া কষ্ট হচ্ছে বলে জানান টিএইচও।