যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়ায় টিকিটি বিক্রি করে ছিপ দিয়ে মাছ ধরা প্রতিযোগীতায় শুভংকরের ফাঁকি হয়েছে। আর এ ফাঁকির মধ্যে দিয়েই প্রতিযোগীতার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বর্তমান পুকুরের মালিক শহরের কিসমত নওয়াপাড়ার প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলে প্রতারণায় প্রায় লাখ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার দিনব্যাপী কোদালিয়া বড় পুকুরে এ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৪০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতি টিকিট (একটি ছিপ) ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে ২২ হাত গভীর বিশাল পুকুরটিতে প্রতিযোগীরা বড় কোন মাছ পায়নি। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারীরা এক ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুকুরে ছিপ ফেলে তেমন মাছ না পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে ফিরে যায় তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ১২টার দিকে পুকুর পাড়ের উপরে চারিদিকে সহস্রাধিক শতাধিক লোকের সমাগম। পাড়ে বসে পানির কীনারার কাছাকাছি ছিপ ফেলে বসে আছেন প্রায় ৪০ জন লোক। এদের প্রায় অধিকাংশের মাছ রাখার পাত্র খালি। হাতেগোনা কয়েকজন রুই ও তেলাপিয়ার ছোট ছোট পোনা সব মিলিয়ে ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম মাছ পেয়েছেন। এক এলাকার ৪ জনে মিলে পেয়েছেন ৩ থেকে ৪ কেজি মাছ। আর বাকীদের সবার পাত্র একেবারেই খালি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, পুকুরের বর্তমান মালিক সিরাজ বিদেশ থেকে ফিরে গত ২ বছর আগে পুকুরটি লিজ নিয়ে বালি কেটে বিক্রি করেন। পরে পুকুরে পানি দিয়ে মাছ ছাড়েন। সপ্তাহে দু’বার জাল টানা হতো পুকুরটিতে এবং এ প্রতিযোগীতার ১ সপ্তাহ আগেও একবার জাল টানা হয়েছে। এত জাল টানলে পুকুরে মাছ না থাকারই কথা।
প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী বাহাদুরপুরের জহির, মহিদুল, শান্তিপদ, সাতমাইলের আজিজুল, আরবপুরের বিমান বাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার মাহাতাব উদ্দিনসহ প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি অভিযোগ করে তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, যেমনটা আশা করেছিলাম সে তুলনায় এ পুকুরে বড় কোন মাছ নেই। মাছের মুখরোচক মসলা, নালশে, চাঁটনি, মধু ও ঘি পানিতে দেওয়া হয়েছে। মাছ থাকলে অবশ্যই ছিপে মাছ উঠবে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলাতে মাছ ধরা প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেছেন তবে মাছ না পাওয়ার এমন ঘটনা এই প্রথম।
সাতমাইল বানেয়ালীর জামির, নোঙ্গরপুরের জালাল, ভেকুটিয়ার আসাদুল জানান, প্রতিটা টিকিট ও সব খরচ বাবদ তাদের জন প্রতি ৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাদের সাথে একটা বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়েছেও বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে অভিয্ক্তু পুকুরের মালিক সিরাজুল ইসলাম প্রতিটি টিকিট ২ হাজায় বিক্রি করার কথা স্বীকার করে বলেন, পুকুরে প্রচুর মাছ রয়েছে। বর্ষায় পার্শ্ববর্তী নঙ্গরপুর মাঠের সব্জি ক্ষেতের সার ও কীটনাশকের পানি পুকুরে প্রবেশ করায় পানিতে গ্যাস সৃষ্টি হয়। এ কারণেই ছিপে মাঠ উঠেনি। পরে প্রতিযোগীদের টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা করে ফেরৎ দিয়েছেন তা তিনি বলেননি।