গণিতে ফেল করায় ১৬ শিক্ষার্থীকে পিটুনি, অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ

যশোরের মণিরামপুর গালদা মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির সদ্য সমাপ্ত সমাপনী মডেল পরীক্ষায় গণিতে ফেল করায় ওই বিষয়ের শিক্ষক ফাতিমা খাতুন তাদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেছেন। শিক্ষকের পিটুনি খেয়ে ৪-৫ জন শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। আর তামান্না নামে এক ছাত্রীর হাত ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বজনরা।

মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে অভিভাবকরা স্কুলে হানা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক আরশাফ আলীর বদলী দাবি করছেন।

এদিকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফাতেমা খাতুনকে শোকজ করেছে শিক্ষা অফিস।

সরেজমিন রোববার (২০ অক্টোবর) এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গালদা মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী মডেল পরীক্ষায় ২৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১২ জন ফেল করেছে। আরও ৬-৭ জনকে ৩৩ নম্বর দিয়ে পাশ দেখানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত সর্বনিম্ন নম্বর ০৭ ও সর্বোচ্চ নম্বর ৪৩।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে গণিত ক্লাসের সময়ে ফেল ও কম নম্বর পাওয়া ১৬ জন শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি পেটান শিক্ষক ফাতেমা।
স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। এদিকে শিক্ষকের হাতে পিটুনি খেয়ে ৫-৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ফরহাদ রেজা নামে এক শিক্ষার্থীর চাচা বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, আমার ভাইপোকে মারার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আরশাফ আলী বলেছেন, ভাল না লাগলে অন্য স্কুলে নিয়ে যান।

নাসিম আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, আমার ভাইজিকে মারার পর তার জ্বর এসে গেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে ২০০ করে টাকা নেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি স্কুলের চক কেনার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল্লাহ বলেন, শিক্ষকের হাতে পিটুনি খেয়ে ৪-৫ জনের জ্বর এসে গেছে। আমি তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। তামান্না নামে এক ছাত্রীর কনুইতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। তার হাত এক্সরে করতে বলা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মারার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ফাতেমা বেগম কোন উত্তর করেননি।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আরশাফ আলী মারার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এমনটি আর হবে না বলে আমরা অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ওই শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যে বলে দাবি করেন তিনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে খেদাপাড়া ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মারার কোন নিয়ম নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষক ফাতেমা খাতুনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। আর প্রধান শিক্ষককে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।