জেএসসি পরীক্ষা: টাকা না দিলে মিলছে না প্রবেশপত্র

জেএসসি পরীক্ষার আর মাত্র দুই দিন বাকি। এরইমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র হাতে পেলেও ব্যতিক্রম মণিরামপুরের টেংরামারী হাইস্কুলে।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বিধিমালায় না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্রের নির্ধারণ করা ৫০ টাকা সরবরাহ করতে না পারায় অনেক পরীক্ষার্থী এখনও প্রবেশপত্র হাতে পায়নি। ফলে পরীক্ষার্থীদের মাঝে উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে প্রবেশপত্র আনতে স্কুলে গিয়ে অনেকেই খালি হাতে ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে।

শুধুমাত্র যারা ৫০ টাকা দিয়েছে তাদেরকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও উপজেলার অনেক স্কুলের জেএসসি পরীক্ষার্থীরা চার দিন আগেই বিনামূল্যে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অনিয়মিত তিনজনসহ মোট ৩৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

শুধু প্রবেশপত্রে নয় কৃষি ও চারুকারুসহ চারটি বিষয়ে শিক্ষকদের হাতে থাকা ২৫০ নম্বরের বিপরীতে নিষিদ্ধ গাইড দেখে লিখতে দিয়ে নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক ২৪০ টাকা হারে পরীক্ষার্থীপ্রতি আদায় করেছেন। যারা টাকা দিবে না প্রধানশিক্ষক তাদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার কিছুদিন পূর্বে মডেল টেস্টের নামে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ করে আদায় করেছেন; যদিও সরকার নির্ধারিত বছরে দুটি পরীক্ষা বাদে টাকার বিনিময়ে মডেল পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম নেই।

এদিকে দফায় দফায় অভিভাবকদের চিঠির মাধ্যমে স্কুলে ডেকে কোচিং বাণিজ্যে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে এই প্রধানের বিরুদ্ধে। কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করানোসহ স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস থেকে কোচিং এর নামে স্কুলের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দেড়শতাধিকের অধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ২০০ টাকা হারে নিচ্ছেন তিনি। আর এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন টিপু ও আনন্দ দাস প্রধান শিক্ষকের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ। তারা কোচিং-এ হাজির না হওয়া শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন। আবার মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে জননী প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে এই প্রধানের বিরুদ্ধে। যেসব শিক্ষার্থীরা গাইড কিনতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক টিপুর বিরুদ্ধে।

সন্তান শিক্ষকদের আক্রোশের শিকার হতে পারে এমন ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক তাদেরকে চিঠি দিয়ে স্কুলে ডেকে নিয়ে কোচিং ক্লাসের কথা বলেছেন। তারা অমত করায় বাচ্চাকে ছাড়পত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

জেএসসি পরীক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার ক্লাসে হেড স্যার গিয়ে বলেছেন, প্রবেশপত্র নিতে গেলে ৫০ টাকা করে দিতে হবে। টাকা না দিলে প্রবেশপত্র দেওয়া হবে না। তখন টিপু স্যার আমাদের বলেছেন, তোরা ২০ টাকা করে দিবি। কিন্তু আমাদের ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
সাকিব ও বৃষ্টিসহ একাধিক পরীক্ষার্থী জানায়,তারা ৫০ টাকা করে দিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেছে।

আর পাবেল, রনি, রানা, বাবু, সুরাইয়া, বৃষ্টিসহ অনেক পরীক্ষার্থী জানায়, টাকা দিতে না পারায় তাদের প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। প্রবেশপত্র পেতে হলে অভিভাবক সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধান শিক্ষক।

সাংবাদিক পরিচয়ে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত বাদে কোন কাজ হয়নি। কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি এই প্রতিবেদকের সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছেন।

যদিও ম্যানেজিং কিমিটির অভিভাবক সদস্য আবুল হোসেন ও ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রবেশপত্র বিতরণে ৫০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে তারা কিছু জানেননা। এই প্রতিবেদকের সামনে তিনি প্রধান শিক্ষককে ফোন করে ৩০ টাকা করে নেওয়ার অনুরোধ করেন।
এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বলেন, প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি আমি দেখছি।