কিশোরগঞ্জে গায়েবি শিশুর জন্ম নিয়ে তোলপাড়!

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ১৩ বছরের কিশোরী শিশুকন্যা জন্ম দেয়ার পর গায়েবি সন্তান জন্ম নেয়ার প্রচারণা চালানোয় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ কুমারী মাতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

সন্তানের জন্মদাতার নাম পরিচয় জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ওই কিশোরীর মা-বাবাকে।

পিতাছাড়া সন্তান জন্ম হওয়ার কথা চিন্তা করার কোনো উপায় নেই বলে জানায় আলেম সমাজ।

জিজ্ঞাসাবাদ ও ডিএনএ টেস্ট করে পিতৃ পরিচয় বের করার দাবি সচেতন নাগরিক সমাজের। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পুলিশের।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্ধুর ইউনিয়নের ১৩ বছরের কিশোরী গত ৬ নভেম্বর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। এ ঘটনার পর মা-বাবা ও স্বজনরা গায়েবি সন্তান প্রসবের প্রচার চালায়।

আর এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মা-বাবাসহ কুমারী মাতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

বুধবার পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরেজমিন পরিদর্শনকালে জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মোক্তাদির জানান, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ এনে আনুমানিক ৭-৮ দিন বয়সী নবজাতক ও এক কিশোরীকে ভর্তি করেছেন। তাকে মহিলা পুলিশ প্রহরায় গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করে নবজাতককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওই নবজাতক ও কিশোরীকে দেখতে হাসপাতালে যান কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার ও পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান হাসপাতালে যান।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার জানান, এ ধরনের আজগুবি ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করে। একই সঙ্গে তার মা-বাবাকেও থানায় এনে নবজাতকের পিতৃপরিচয় জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ জানান, ৬ নভেম্বর রাতে এ কিশোরী একটি কন্যা সন্তান প্রসবের ঘটনা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। জানতে চাইলে তার মা-বাবা ওই সন্তান গায়েবিভাবে হয়েছে, আল্লাহ দিয়েছে বলে প্রচার চালায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে।

এ সময় তিনি ডিএনএ টেস্ট করে নবজাতকের পিতৃপরিচয় জানার ব্যবস্থা করার দাবি করেন।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা দীন ইসলাম বলেন, পিতা ছাড়া কিংবা কোনো পুরুষের সাহচর্যের মাধ্যমে শুক্রাণু প্রবেশ ছাড়া সন্তান জন্মের কথা চিন্তাও করা যায় না। এ সময় তিনিও ওই নবজাতকের জন্মদাতা পুরুষটিকে খুঁজে বের করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান জানান, কিশোরীকে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরীর নবজাতক শিশুর জন্মদাতার নাম জানতে তার মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সকালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার সাহেদল ইউনিয়নের এস আর ডি শামসুদ্দিন ভূঁইয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে ঝাড়ফুঁক দিতে আসেন পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবেড় গ্রামের কথিত কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া। তার আগমন উপলক্ষে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিশাল মাঠ।

এ ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় শনিবার একই জেলার পাকুন্দিয়া থানার শুঁখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠে মঞ্চ তৈরি করে ঝাড়ফুঁকের আসর বসায় কথিত কবিরাজ সবুজ মিয়া। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে চর পলাশ মাঠে ৫০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল নিয়ে উপস্থিত হয়। অদৃশ্য প্রচার-প্রচারণার ফলে সেদিন কাক ডাকা ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ উপজেলা ও আশপাশের সব রাস্তা এসে মিশে যায় চর পলাশের ওই ফসলের মাঠে।