ট্রাক মিলছে জিম অ্যাপে

চলতি বছরে পণ্য পরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে অ্যাপ ভিত্তিক সার্ভিস জিম ডিজিটাল ট্রাক। জিম অ্যাপের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া আর পণ্য পরিবহন হচ্ছে সারা দেশে দ্রুতগতিতে। একদিকে কাস্টমার মোবাইলেই ট্রাক ভাড়া করতে পারছেন, অন্যদিকে ট্রাক মালিক ও ড্রাইভাররা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ট্রিপ ধরতে পারছেন। জিম অ্যাপ ব্যবহারকারীদের থেকে জেনে নেওয়া যাক তাদের অভিজ্ঞতার কথা।

মনির সাহেব ঢাকায় থাকেন এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। ভাড়া বাসায় থাকার কারণে মাঝে মাঝে তাকে বাসা বদল করতে হয়। সম্প্রতি বাসা বদল করতে গিয়ে তিনি জিম অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং তার চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা জানান। বলেন, “আমি বাসা বদল করতে গিয়ে আসেপাশে খোঁজ করি, অফিসের সহকর্মীদের সাহায্য নেই, এমনকি নিচের চায়ের দোকানদারের সাহায্যও নেই। কিন্তু ২ দিনেও একটি ট্রাক ভাড়া পাই না। অথচ পরবর্তীতে আমি জিমের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করি খুব সহজে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে। জিমে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং ব্যবস্থা থাকার ফলে আমি বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্যে ট্রাক ভাড়া করতে পারি। কোন ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলাও কম।

অন্যদিকে খোকন সাহেব একজন ব্যবসায়ী। তিনি যাত্রাবাড়ী থাকেন এবং নিয়মিত পণ্য চট্টগ্রাম পোর্টে পাঠান। গেল বর্ষায় একদিন বিকেলে তার ১৫ টনের একটি কাভার্ড ভ্যান দরকার হয় যা তিনি কয়েকঘণ্টা চেষ্টা করেও পান না। ফেসবুকের মাধ্যমে জিম অ্যাপ সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পেয়ে যান কাঙ্খিত ট্রাকটি।

নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ১৫ টনের ট্রাক যাবে তাও বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে, কি করে সম্ভব!

সেটি সম্ভব হয়েছিল কারণ, ট্রিপটিতে যিনি বিড করেছেন সেটা তার রিটার্ন ট্রিপ ছিল। ড্রাইভার মাজেদ প্রায়ই ঢাকা থেকে রিটার্ন ট্রিপ নিয়ে চট্টগ্রাম যান জিম অ্যাপ ব্যবহার করে। ট্রিপ নিশ্চিত করতে তিনি অনেক সময় অল্প টাকায় বিড করেন, কারণ প্রায়ই তার ট্রাক খালি ফেরত যায়। এ প্রসঙ্গে খোকন সাহেব বলেন, “বৃষ্টির দিনে জরুরী প্রয়োজনে অর্ধেক ভাড়ায় ট্রাক পাওয়া রীতিমত অলৌকিক ব্যাপার ছিল। আর কোন ধরণের জটিলতা ছাড়াই পণ্য চট্টগ্রামে পৌঁছে যায়। আমি এরপর থেকে নিয়মিত জিম অ্যাপ ব্যবহার করে পণ্য পাঠাচ্ছি। ট্রাক ভাড়াও পাচ্ছি বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।”

জিম অ্যাপ ব্যবহারকারী ট্রাক মালিক শামসুদ্দিন জানান, আমার ১০টি বড় ট্রাক নিয়মিত খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, পাইকগাছায় ট্রিপ পাচ্ছে আবার রিটার্ন পথে ট্রিপ নিয়েও আসছে। আগে শুধু পণ্য নিয়ে যেত আর ফিরতি পথে খালি ট্রাক ফেরত আসত। তবে জিম অ্যাপ ব্যবহার করে এখন ফিরতি পথেও ট্রিপ নিশ্চিত হয়েছে। ট্রাক আর ট্রিপের অভাবে বসে থাকছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের লজিস্টিক ম্যানেজার জানান, “সম্প্রতি আমরা জিমের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি। ফলে পণ্য পরিবহনের জন্য সব ট্রাক জিম অ্যাপের মাধ্যমে পাচ্ছি। আমাদের পণ্য চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে লোড হয়ে সারা দেশে বিভিন্ন ডিলার পয়েন্টে পৌঁছে যাচ্ছে জিমের ট্রাকের মাধ্যমে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে চমৎকার এই সার্ভিস সময় বাঁচাচ্ছে ও পরিবহন ব্যবস্থা আরও সহজ করেছে।”

ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে অ্যাপ ব্যবহারে এই অভিজ্ঞতাগুলো খুবই চমকপ্রদ। জিম ডিজিটাল ট্রাকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিম অ্যাপ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে গুগল প্লে-স্টোরে। কাস্টমার ও পার্টনারের (ট্রাক মালিক/ ড্রাইভার/ এজেন্ট) জন্য দুটো আলাদা অ্যাপ আছে। দুটো অ্যাপই এ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যবহার উপযোগী। এছাড়াও আইওএস বা অ্যাপের আইফোন সংস্করণ নিয়েও জিম কাজ করছে যা খুব শীঘ্রই অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাবে।