যশোরে শীতে ছিন্নমূল ও নিন্ম আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বনিফেসের শীত নিবারণ বৃক্ষ

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে নিন্ম আয়ের ছিন্নমুল মানুষ। এর মধ্যে অসহায়, দরিদ্র ও নিন্ময়ের মানুষদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনিফেসের ব্যতিক্রমধর্মী শীতনিবারণ বৃক্ষ নামে একটি প্রতিকী বৃক্ষ শীত নিবারণে পাশে দাঁড়িয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনিফেসের সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ১১ ডিসেম্বর দুপুরে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানার পুলিশ বক্সের পাশে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক ভাবে শীত নিবারণ বৃক্ষের উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন প্রায় ২০০ পিচ কাপড় নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর প্রথমবারের মত এ শীত নিবারণ বৃক্ষের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনমাসে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পছন্দের কাপড় নিয়েছে যশোরের ছিন্নমূল ও নিন্ম আয়ের মানুষ। গতবারের তুলনায় এবারের বিতরণ হচ্ছে বেশি।

বনিফেসের সদস্য শিমুল জানান, সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষেররা ইচ্ছামত কাপড় এখান থেকে নিয়ে যান। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যে কোন সময় যে কেউ এ কাপড় নিতে পারেন। আবার সমাজের বিত্তবানরা সুবিধামত সময়ে শীত নিবারণ বৃক্ষের ওপর গরম কাপড় রেখে যাচ্ছেন। একই কায়দায় যাদের প্রয়োজন তারা নিয়ে যাচ্ছেন।

যশোর শহরের পুরাতন কসবার ব্যাংকার আব্দুল হক জানান, বনিফেসের শীত নিবারণ বৃক্ষ ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। নিন্ম ও ছিন্নমুল মানুষকে শীত থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে। তাদের এ উদ্যেগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনদিনে আমি আমাদের বাদ দেয়া ১৫টি কাপড় দিয়েছি।

বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি অধ্যাপক মো. সামসুজ্জামান জানান, ২০১৮ সালে ৫টি কাপড় দিয়েছিলাম। এবার ১০টি কাপড় দিয়েছি। আরো ৭টি কাপড় দেয়ার ইচ্ছা আছে। নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য শীত নিবারণ বৃক্ষ খুবই উপকারী দাবি করে তিনি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে যশোরের ছিন্ন মানুষের বিশাল উপকার হবে বলে মনে করেন।

যশোর সরকারি এম এম কলেজের ছাত্রী ফাতেমা আফরিন বিনা জানান, আমি ও আমার বান্ধবীরা এবার ৯টি গরম কাপড় দিয়েছিলাম। ২০ ডিসেম্বর বিকেলে এসে দেখি সেগুলো নিয়ে গেছে।

যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার হাফিজুর রহমান (৭৫) জানান, ভিক্ষা করে কোন মতে সংসার চলে। তারপর এ শীতে কাপড় কিনতে না পেরে শীত নিবারণ বৃক্ষ থেকে আমি ও আমার স্ত্রীর দুটি কাপড় নিয়ে এসেছি। আমার প্রতিবেশী কানা রেহেনা বেগমও নিয়ে গেছেন দুটি।
তিনি আরো জানান, আমি যখন শীত নিবারণ বৃক্ষের সামনে ছিলাম। তখন আরো কয়েকজন তাদের পছন্দের মত গরম কাপড় নিয়ে গেছে।

বনিফেসের উপদেষ্টা নূর ইমাম বাবুল জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনিফেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমাজের বিভিন্ন অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শীত নিবারণ বৃক্ষের মাধ্যমে দরিদ্রদের মধ্যে পছন্দমত কাপড় দেয়া হচ্ছে।

বনিফেসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বেলাল হোসেন বনি জানান, যশোরের ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীত নিবারণ বৃক্ষের মাধ্যমে কাপড় দেয়া হচ্ছে। গত ১১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কাপড় দেয়া হয়েছে। তারপর গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি পরিমাণে কাপড় নিচ্ছে। যে পরিমাণে কাপড় নিয়ে যাচ্ছে তুলনামূলক সে পরিমানে কাপড় পাচ্ছি না। সমাজের বিত্তবানদের কাপড় দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম জানান, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের জন্য বনিফেসের শীত নিবারণ বৃক্ষ বিশাল উপকার করছে। বনিফেসের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সমাজের সকল বিত্তবানদের বাদ দেয়া কাপড় দিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।