সংসদ থেকে বিএনপির ওয়াকআউট

songsod

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার দাবির বিষয়ে সংসদে কোন আশ্বাস না পাওয়ার অভিযোগ তুলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন বিএনপির এমপিরা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর বিএনপির সংসদ সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। এটাই চলতি একাদশ সংসদে বিএনপির প্রথম ওয়াকআউট।

এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য উদ্ধৃত করে সিটি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়ে সংসদে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য দাবি করেন। একই সাথে নির্বাচন অবাধ করতে উদ্যোগ না নিলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করারও হুমকি দেন।

স্পিকার বিএনপির এমপির বক্তব্যের বিষয়ে বক্তব্য রাখতে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে ফ্লোর দেন। সরকার দলের সিনিয়র দুই নেতা প্রসঙ্গক্রমে অতীতে বিএনপি সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সংসদ উপনির্বাচনসহ নানা নির্বাচনে অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যের পর এমপি হারুন আবারও ফ্লোর চাইলে স্পিকার তা নাকচ করে দেন। এ সময় হারুনুর রশীদ মাইক ছাড়াই কথা বলে বিএনপির সংসদ সদস্যদের নিয়ে ওয়াকআউট করেন।

এর আগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ বর্তমান সরকারের সময় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনের সমালোচনা করে বলেন, এই নির্বাচন কি আসলেই নির্বাচন হবে? এতে কি জনগণ ভোট দিতে পারবে? এই নির্বাচনের পরিবেশ কি সরকার নিশ্চিত করতে পারবে? এই বিষয়ে দায়িত্বশীলদের থেকে উত্তর পেতে চাই। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং নির্বাচনকে নিয়ে যে সহিংসতা চলছে তা বন্ধের দাবি করছি। না করলে আমরা সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করবো। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনটি আসলে হবে, নাকি প্রহসন চলবে? সারাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার বার বার বলছেন যে আপানার নির্বাচনে আসেন শেষ পর্যন্ত থাকেন। আমরা শেষ পর্যন্ত থাকব আমাদের মিছিল থেকে লোক ধরে নিয়ে বলবেন ছিনতাইকারী; মিছিল থেকে ধরে নিয়ে বলবেন পকেটমার; মিছিল থেকে ধরে নিয়ে গায়েবী মামালা দেবেন; এটা কত দিন চলবে। তিনি বলেন, দেশে কি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমরা কি নির্বাচনে পরিবেশ দেশে আনতে পারব না। এটি সৎ ইচ্ছার ব্যাপার। তার প্রমাণ আমার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে একেবারে শান্তিপূর্ণ সেখানে কোন ধরনের সহিংসতা হয়নি। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে। এটা সৎ ইচ্ছার ব্যাপার। চট্টগ্রামে ২২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। কাজেই সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বির্তক তৈরি হয়েছে মন্ত্রী, এমপিদের অংশগ্রহণ, কোন ঘরোয়া সভার করার সুযোগ নাই এমপিদের। আপনারা আইন পাস করেছেন, আইন করে আবার আপনারাই দাবি জানাচ্ছেন নির্বাচন কশিনের কাছে। পুলিশের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে, সিনিয়র এমপিরা মন্ত্রীরা যদি পুলিশকে বলে এটা কর- তার বাইরে পুলিশ কোন কাজ করতে পারে?

জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ওনার (হারুনের) কথাই চট্টগ্রামে ২২ শতাংশ ভোট কাস্টিং, যদিও ২৪ শতাংশ। নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠ হয়েছে, কারণ যদি সেখানে আওয়ামী লীগ প্রভাব খাটাতো তাহলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটে আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারত। তা তো করেনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ৯০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল। হারুন প্রশ্ন রেখেছেন ওনার কাছে কি জনমত মাপার যন্ত্র আছে? এর জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, মাপার যন্ত্র আছে হারুনুর রশীদের দলের চেয়ারপার্সনের কাছে। কারণ তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে তিনি বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০টার বেশি আসন পাবে না। ওনার কাছে মাপার যন্ত্র আছে। এই সেই আওয়ামী লীগ যার অধীনে ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়েছিল। গাজীপুর নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হত আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হত। আপনার নেত্রীর কাছে ভোট গোণার ও পাওয়ার মেশিন আছে। যার জন্য তিনি বলতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হত। তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই নির্বাচন শুরু আগ থেকে বিএনপি বলছে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এটা তাদের ট্রাডিশন, তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওনি বললেন ঢাকায় সব জায়গায় গোলমাল হচ্ছে, কোথায়?

এমপিদের প্রচারণা নিয়ে তোফায়েল বলেন, আমি নিজে ইসিতে গিয়েছিলাম, তাদের সাথে পরামর্শ করতে। তারা স্বীকার করেছে এটা আইন না। আইন হলে সংসদে পাস করা হয়। এটা হল একটা বিধি। সেই বিধিতে লেখা আছে সুবিধাভোগী এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু সংজ্ঞায় এমপির নাম আছে এটা ঠিক। আপনি বলেন, আপনি (হারুন) আমি কি সুবিধাভোগী? সুবিধাভোগীর সংজ্ঞা কি? আমি মন্ত্রী ছিলাম, এমপি ছিলাম, এখনও আছি এটা আমার অপরাধ। আর মওদুদ আহমদ উত্তরের সমন্বয়ক। তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন, তিনি এমপি নন, বিএনপি’র আমলে মন্ত্রী ছিলেন, এরশাদের আমলে উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মওদুদ সাহেব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না, গুরুত্বপূর্ণ হলাম আমরা? আমরা বলেছি আপনাদের কাছে পরিবর্তন করতে আসি নাই। আমরা ক্ষমতাসীন দল আমরা যদি পরিবর্তন করি তাহলে আমাদের উপর বিরূপ ধারণা হবে যে, আমরা নির্বাচনে জেতার জন্য আমরা পরিবর্তন করেছি। করব না। ওনারা চেষ্টা করেছিলেন এটা কে সংশোধন করতে, পারেন নাই। আমরাও মেনে নিয়েছি।

আমির হোসেন আমু বলেন, সব সময় বিএনপি রাজনীতি নেগেটিভ, নির্বাচন নেগেটিভ পলিটিকস করে আসছিল। ১৯৮৬ সালে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নাই। তারা ক্ষমতা গ্রহণের অন্য পথ অবলম্বন করার চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীকালে তারা নির্বাচন বিমুখতা প্রমাণ করেছে। ৫টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরেও যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না তাদের চিন্তা চেতনা কোথায় ছিল? তারা নির্বাচন বিমুখতা সব সময় থাকে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে রাজনীতিক বিরোধী। মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। যতই তারা মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত হয় ততই ওনারা কারচুপির কথা বলেন।