মণিরামপুরে ছাগল চুরি মামলায় আটক, মোটরসাইকেল চুরির পেন্ডিং মামলায় চালান!

jessore map

ছাগল চুরির অভিযোগে আটক হলো প্রতিবন্ধি মামুন অথচ পুলিশ তাকে মোটরসাইকেল চুরির একটি পেন্ডিং মামলার আসামি হিসেবে চালান দিলো আদালতে। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার আটমাইল গ্রামে।

আটক প্রতিবন্ধি মাহমুদ হোসেন মামুন ঝুমঝুমপুর মান্দিয়া বটতলা তুষারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। পেশায় ইজিবাইক চালক। স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে দিন আনে দিন খায়। মণিরামপুরে থাকে বড় বোন। সে খুবই অসুস্থ তাই গত ১৭ জানুয়ারি পরিচিত একজনের ইজিবাইকে চড়ে যাচ্ছিলেন মণিরামপুরে। মণিহার মোড় থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি একটি ছাগল নিয়ে একই ইজিবাইকে উঠে। মণিরামপুরের আটমাইল গ্রামে ছাগল নিয়ে নামে ওই ব্যক্তি। কথা ছিল ওই বাইকে করেই সে মণিরামপুরে যাবে। ওই এলাকায় এক ক্রেতা ছিল যিনি ছাগলটি কেনার কথা। বিক্রির সময় ওটা চুরি করা ছাগল বলে স্থানীয়রা টের পায়। মামুনের হাতে ছাগলের দড়ি ধরিয়ে লোকটা দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ওই অপরিচিত লোকটা আর ফিরে আসে না। একপর্যায় স্থানীয়রা মামুন ও ছাগলসহ পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। ছাগলসহ সারারাত মামুনকে কাটাতে হয় থানার মণিরামপুর থানার বাড়ান্দায়। সকালে পরিবারের লোকজন থানায় আসেন। থানা পুলিশের অনুময় বিনয় করে ছেড়ে দেয়ার জন্য কিন্তু পঙ্গু, অসহায় পরিবারের আকুতি মিনতিতে মন গলেনা পুলিশের। ছাড়তে হলে মোটা অংকের টাকার ঘুষের হুংকার ছাড়ে পুলিশ অন্যথায় বড় ধরণের পেন্ডিং মামলায় চালানের হুমকি। মণিরামপুরে থাকা মামুনের বোন এক পর্যায় স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির কাছে সাহায্য চান। তিনি মামুনের বোনের অনুরোধে পুলিশকে অনুরোধও করেন। কিন্তু তাতেও পুলিশের অবৈধ ঘুষের ক্ষুধা থেকেই যায়। সর্বশেষ দুপুরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের একটি মোটরসাইকেল চুরির পেন্ডিং মামলায় আদালতে চালান দেয় পুলিশ।
গত শনিবার বিকেলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্তরে কাঁদতে কাঁদতে এমনটিই জানান।

তিনি আরো বলেন, তার ভাই ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধি। ঠিকমত হাটতে পারেনা। পুলিশ বললো তার ভাই ছাগল চুরি করেছে তাড়াতাড়ি থানায় আসেন। এরপর থানায় যেয়ে ভাইকে মুক্তি করতে পারলেন না তিনি। এখন আদালতে এসে শুনছেন সে ছাগল না দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেল চুরি করেছে। সর্বশেষ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ভাইকে বিদায় জানালেন। আর বিচার চাইলেন আল্লার কাছে।

এদিকে মামলার চালন পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, আদালতে মামলার মনগড়া চালান পেশ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। চালানে পুলিশ উল্লেখ করা হয়েছে, মামুন বিভিন্ন বসত বাড়ি, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে থাকে। গত ২০ ডিসেম্বের মণিরামপুর ঘুঘুদহা গ্রামের কাঞ্চন কুমার ঘোষালের ঘরে একটি বাজাজ ডিসকভার ১০০ সিসির মোটরসাইকেল রাখা ছিলো। যার দাম একলাখ ৪২ হাজার ৫শ’ টাকা। ওইরাতে গাড়িটি চুরি হয়। এঘটনায় গাড়ির মালিক কাঞ্চন কুমার ঘোষাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। আর মামুন ওই বাড়ির মেইন গেটের তালা ভেঙেঘরে ঢুকে ওই মোটরসাইকেল চুরি করেছে বলে প্রমান পেয়েছে বলে চালানে উল্লেখ করেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মণিরামপুর থানার এস আই জহির রায়হান। এছাড়া ১৭ জানুয়ারি রাত দুইটার সময় মণিরামপুর মোহনপুর গ্রামে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করছিলো সেসময় মামুনকে আটক করা হয় বলে ওই চালানে উল্লেখ করা হয়।

অর্থাৎ, ছয় হাজার টাকার একটি ছাগল চোরের অভিযোগ ছিলো মামুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ তাকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে আদালতে চালান দিল পুলিশ। দুপুর তিনটায় আটমাইল থেকে মামুনকে আটক করা হলেও গভীর রাতে অন্য স্থান থেকে পুলিশ আটকের কথা আদালতে জানালেন।

এ বিষয়ে মোহনপুর ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে মামুনের বোন তার কাছে এসেছিলেন। তিনি নিজেও কয়েকবার থানা পুলিশকে প্রতিবন্ধি মামুনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু পুলিশ তার কথা শোনেনি। ওল্টো মিথ্যা মামলায় চালান করেছে মামুনকে।

মোবাইল ফোনে কথা হয় স্ত্রী শাবানার সাথে তিনি জানান, তার সময় কাটছে এখন কারাগার আর আদালতের বাড়ান্দায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মামুনের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে বাজার বন্ধ হয়ে। ছোট ছোট দু’সন্তান নিয়ে এখন তারা পথে পথে ঘুরছেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জহির রায়হানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মামুন ছাগল চুরি করেছিলো। তাকে ধরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। কিন্তু ছাগল চুরির অভিযোগে আটক হলে কেন মোটরসাইকেল চুরি মামলায় চালান দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ব্যস্ত বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন। পরে আর কথা বলা সম্ভাব হয়নি।