করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে পালালেন যুবক, মণিরামপুরে তোলপাড়

করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন এক যুবক পালিয়ে যশোরের মণিরামপুরে আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে জুম্মার সময় উপজেলার টেংরামারী জামে মসজিদে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ওই সময় মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা এক ব্যক্তিকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাকে বের করে দেওয়া হয়েছে তিনি সম্পর্কে পালিয়ে আসা ওই যুবকের চাচা।

এদিকে এলাকায় করোনা রোগী আশ্রয় নিয়েছে এমন খবরে মসজিদের মুসল্লিসহ এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দুপুরে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সেই বাড়িটিতে লাল নিশান টানিয়ে দিয়েছে।

সরেজমিন জানা যায়, ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা যুবকের নানা বাড়ি মণিরামপুরের বিজয়রামপুরে। ছেলেটি পেশায় গাড়ি চালক। ঢাকায় একটি হজ্জ্ব গ্রুপের হয়ে বিমানবন্দরে যাত্রী আনা নেওয়া করত সে। হঠাৎ কয়েকদিন আগে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয় যুবকটি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন আবস্থায় পালিয়ে এসে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকালে মণিরামপুরের বিজয়রামপুরে নানা বাড়িতে আশ্রয় নেয় ছেলেটি। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর চাপাচাপির এক পর্যায়ে ওই যুবক রাতে পালিয়ে একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে দাদা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ছেলেকে ঘরে তালাবদ্ধ করেন তার পিতা।

শুক্রবার সকালে খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক শুরু হয়। এরপর জুম্মার নামাজের সময় টেংরামারী জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন টিপু ঘোষণা দেন, ‘এলাকায় করোনা রোগী এসেছে। আপনারা সাবধান হন।’ এসময় তিনি নামাজে আসা ওই ছেলের চাচাকে বের করে দেন। মসজিদের এই ঘোষণা শুনে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে লোকজনের চাপাচাপিতে ওই ছেলেকে তার পিতাও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে গ্রাম পুলিশ ওই বাড়িতে লাল নিশান টানিয়ে দিয়েছেন। বিকেলে খবর পেয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য সহকারী মহিতোষ কুমার রঘুনাথপুর গ্রামে ওই যুবকের সন্ধানে যান। তিনি গিয়ে বাড়িতে সেই যুবককে পাননি।

রঘুনাথপুর গ্রামের রুস্তম ও মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের বাড়ির পাশের বাড়িতে ওই ছেলেটি আশ্রয় নিয়েছে। শুনেছি, ওর করোনা হয়েছে। আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ওই ছেলেটি আফতাপ হজ্জ্ব গ্রুপের গাড়ি চালক। সে হাজীদের বিমানবন্দরে আনা নেওয়ার কাজ করতো আর ঢাকার মিরপুরে মালিকের বাড়িতে থাকত। সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে মিরপুরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এরপর ওই এলাকার কয়েকটা বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ছেলেটিও একটি বাড়িতে আটকা পড়ে। সেখান থেকে সে পালিয়ে মণিরামপুরে চলে এসেছে।

ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ আরো বলেন, খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ইউএনও পুলিশ নিয়ে বিজয়রামপুরে সেই বাড়িতে গেছেন। তারা ওই ছেলেকে খুঁজে পাননি।
তবে সন্ধ্যায় ওই যুবক আবারও বিজয়রামপুরে আশ্রয় নিয়েছে বলে তার মামা ফোনে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে আমরা বিজয়রামপুরে গিয়েছিলাম। সেই ছেলেকে পাইনি। আগামীকাল আবারও খোঁজ নেব। তবে ছেলেটি সুস্থ আছে বলে জেনেছি।