নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে বাঘারপাড়ার ‘খান ভাই’

দেশে করোনা মোকাবেলায় একদিকে আতঙ্ক অন্যদিকে বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করা নিয়েই যাদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেরই দিন কাটছে না খেয়ে। ঠিক তখনই মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন একদল স্বপ্নবাজ মানুষ। তাদের একজন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের তরুণ সমাজসেবক মাসুম রেজা খান।

যিনি এলাকার সকলের কাছে ‘খান ভাই’ নামে পরিচিতি। স্থানীয় মথুরাপুর যুব সংঘ নামের একটি অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী সংঘঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এর সদস্য। তারা খান ভাইয়ের মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড করে থাকে।

জানা গেছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে পড়া ঘরবন্ধি নিম্ন আয়ের ৪ শতাধিক পরিবারকে নিজস্ব অর্থায়নে খাবার দিয়েছেন মাসুম রেজা খান। প্রথমে তিনি সংগঠনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম ঘুরে তালিকা প্রস্তুত করেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেন। তার দেওয়া খাবার পেয়ে এমন অনেক পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে।

সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে নিজ দ্বায়িত্বে মাইকিংয়ে প্রচারণা চালান। করোনা সচেতনার লিফলেট নিয়ে ছুটে গেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। ৩’শ লোকের মাছে সাবান বিতরণ করেছেন। পাড়া মহল্লায় টিউবওয়েলে বেঁধে দিয়েছেন সাবান। সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতায় জীবানুনাশক স্প্রে করেন স্থানীয় হাট-বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে। করোনা প্রতিরোধে খান ভাই ও তার সহযোদ্ধাদের এসব কর্মকান্ড সর্বজনে প্রশংসিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাসুম রেজা খান বাঘারপাড়া উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধাকালীন চাঁপাবাড়িয়া ট্রেনিং সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বন্দবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। মাসুম ২০০৩ সালে খাজুরা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে যশোর পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। দেশের বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদনের স্বপ্নদ্রষ্টা কৃষিবীদ মরহুম আইয়ুব হোসেনের হাত ধরে সে বছরই সামাজিক কর্মকান্ডে পা রাখেন। সরাসরি যুক্ত হন বাংলাদেশ পরিবেশ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনে। ২০০৬ পড়ালেখার পাশাপাশি নিজ এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড শুরু করেন। এর মধ্যে এক মঞ্চে ৩০০ বৃদ্ধকে সংবর্ধনা, শবে বরাতে হালুয়া ও রুটি বিরতণ, ড্রেনে নেমে ড্রেন পরিষ্কার, মশক নিধন, রাস্তার পাড় ভাঙ্গা ও কালভার্ট সংস্কার, দুঃস্থদের পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ানে ও ১ হাজার কৌমলমতি শিশুর মাঝে আইসক্রিম বিতরণ উল্লেখ্যযোগ্য। মাসুম ঢাকার একটি বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ইলেকট্রনিক্স টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি শেষ করে বর্তমানে এলাকায় ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড করছে।