মিলনের পর পুরুষ মাকড়সাটিকে হত্যা করে স্ত্রী!

মাকড়সা দর্শন বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সুখকর নয়। মানুষের ক্ষতি না করলেও তার শারীরিক গঠনের জন্য অনেকেই মাকড়সা দেখলে ভয় পায়। তবে পিকক স্পাইডার প্রজাতি মাকড়সা দেখতে মোটেও বিদঘুটে নয় বরং দৃষ্টি নন্দন। শরীর জুড়ে তার রঙের খেলা। নানা রং বেয়ে পড়ছে তার গায়ে!
পিকক স্পাইডার জাম্পিং স্পাইডার পরিবারভুক্ত একটি প্রজাতি। এটার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যারাটাস ভোলানস যা ম্যারাটাস বর্গভুক্ত। এই প্রজাতির মাকড়সার পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় লিঙ্গের শারীরিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলে তাদের বিচরণ। কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, ক্যাপিটাল টেরিটোরি, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং তাসমানিয়ায় পিকক স্পাইডারের দেখা মেলে।

অত্যাধিক সুন্দর মাকড়সাবিজ্ঞানীরা ১৮৮০ সালের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫টি প্রজাতির পিকক স্পাইডারের সন্ধান পেয়েছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া জাদুঘরের একজন কীটতত্ত্ববিদ এ বর্গভুক্ত সর্বশেষ সাতটি প্রজাতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। পিকক স্পাইডারের বাংলায় ময়ূর মাকড়সা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মাকড়সাটি দেখতে শরীরের রঙের বিচারে অনেকটা ময়ূরের মতোই। ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ আক্টাভিয়াস পিকার্ড-কেমব্রিজ এই প্রজাতির বর্ণনা দিয়েছেন। তার ভাষায়, এই মাকড়সার শরীরের রঙের সৌন্দর্য বর্ণনা করা সত্যিই কঠিন। কিছু কিছু গবেষক এটাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রংধনু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সাত প্রজাতির ময়ূর মাকড়সামাথায় ছোট ছোট সোনালি লোম, শরীরের পেছন অংশটা গাড় কালো। লাল, নীল এবং কালো রঙের মিশ্রণে তাদের বেশ আকর্ষণীয় দেখায়। পুরুষ পিকক স্পাইডারদের পেটে সাদা লোমের সঙ্গে ফ্ল্যাপের মতো বর্ধিত অংশ আছে। যেগুলো সঙ্গমের সময় ব্যবহার করে। যৌন মিলনের জন্য পুরুষ পিকক স্পাইডারের ক্রিয়াকলাপ বেশ আকর্ষণীয়।

অনেক প্রাণী যৌন মিলনের জন্য শরীরের রং পাল্টায় আবার কেউ উদ্ভট শব্দ করে, নাচে কিংবা বিশেষ অঙ্গভঙ্গি করে। তবে শরীরের মাধ্যমে সাদা রঙের আলোক বিভ্রম তৈরি করে একমাত্র পুরুষ পিকক স্পাইডার। ময়ূরের মতো এই প্রজাতির পুরুষ মাকড়সাও যৌনমিলনে সঙ্গিনীকে আকর্ষণের জন্য বর্ণিল রঙের শরীরের লোম নাড়িয়ে নাচে।

মিলনের পর পুরুষকে আক্রমণ করে স্ত্রী ময়ূর মাকড়সাতারা লাল, নীল, কমলা, সোনালি ইত্যাদি বর্ণের লোম বের করে পশ্চাদ্দেশ দুলিয়ে বিশেষ নৃত্য প্রদর্শন করে। এর মাধ্যমে নারী মাকড়সাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে তারা। তবে পুরুষ পিকক স্পাইডারের প্রতি যদি নারী স্পাইডারটি আকৃষ্ট না হয় তাহলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে।

তখন নারী স্পাইডারটি পুরুষটিকে আক্রমণ করে হত্যা এবং খেয়ে ফেলার চেষ্টা করে। এমনকি মিলনের পরেও নারী স্পাইডারটি এমন কাজ করতে পারে। আক্রমণের শিকার পুরুষ পিকক স্পাইডার সাধারণত লাফ দিয়ে দূরে গিয়ে জীবন রক্ষা করে। আর ভাগ্য খারাপ হলে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

পিকক স্পাইডারের শরীরে রঙের বাহারপিকক স্পাইডার মূলত পোকামাকড় এবং অন্যান্য মাকড়সা খেয়ে থাকে। তাদের তীব্র দৃষ্টি শক্তির জন্য সহজেই শিকার ধরতে পারে। যে কোনো নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ পটু তারা। ম্যারাটাস গণের অন্তর্ভুক্ত সব প্রজাতিই কম-বেশি বিষাক্ত। ম্যারাটাস ভোলানসও স্বল্প মাত্রায় বিষাক্ত তবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।

প্রোসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যারাটাস বর্গের ভোলানস প্রজাতির এই মাকড়সার পিঠের রঙিন ত্বকে যে কালো ছাপগুলো রয়েছে, সেগুলো বিশেষ ধরণের কালো বর্ণ।পৃথিবীর সবচেয়ে গাঢ় কালো বস্তুর সঙ্গে এর তুলনা যেতে পারে। গাঢ় কালো ছাপগুলোর কারণে এর গায়ের অন্যান্য রংগুলো অধিক আকর্ষণীয় দেখায়, ফলে তীব্র আলোক বিভ্রম সৃষ্টি হয়।