যশোরে হাসপাতাল কর্মচারীসহ আরো ১১ করোনা রোগী শনাক্ত

coronavirus

যশোরে নতুন করে আরও ১১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একজন কর্মচারীসহ ৪জনের শরীরে করোনা পাওয়া গেছে। এ নিয়ে যশোর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো মোট ৫৬ জন।

এছাড়া, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল যশোর জেলা থেকে ৭৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্টের ফলাফল বুধবার বিকেলে পাওয়া যায়নি বলে যশোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহনেওয়াজ নিশ্চিত করেছেন।

অল্প দিনের ব্যবধানে সংক্রমন করোনা রোগী আশংকাজনক হারে শনাক্ত হওয়ায় যশোর জেলা জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

যশোরে আক্রান্তদের মধ্যে মণিরামপুর উপজেলায় ৪জন, কেশবপুর উপজেলায় ২জন, চৌগাছায় ১জন ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একজন কর্মচারী, একজন সংবাদকর্মী ও দুইজন হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল। সংক্রমণ করোনা ভাইরাস আতংকে বুধবার যশোর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক কর্মীর মাধ্যমে জীবানু নাশক ঔষধ স্প্রে করতে দেখা গেছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোম সেন্টারের ল্যাবে বুধবার ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে যশোরে ৬৫ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১ টি করেনা ভাইরাসের পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। বাকি ৪৮ টি নমুনা যশোরের পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের সবক’টিতে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। নেগেটিভ রেজাল্টের মধ্যে ঝিনাইদহের ৩৩ টি, মাগুরার ৯ টি ও নড়াইলের ৬ টি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের পরীক্ষাগারের সদস্য ও এনএফটি বিভাগের চেয়ার পারসন ড. শিরিন নিগার সাংবাদিকদের জানান, জেনোম সেন্টারে বুধবার ২৯ এপ্রিল ১শ’ ১৩ টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে মোট ১১ জনের শরীরে করোনার জীবানুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আক্রান্তরা সবাই যশোর জেলার। বাকিরা ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের ৪৮ টি নমুনার মধ্যে সবকটিই নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। পরীক্ষার ফলাফল আইইডিসিআরসহ সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনকে মেইল দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আক্রান্তরা বর্তমান কোথায় আছেন তাদের অবস্থান সিভিল সার্জনরা কোড অনুযায়ী জানাতে পারবেন বলে ড. শিরিন নিগার জানান।

যবিপ্রবি জেনোম সেন্টারে সম্প্রতি বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলার করোনা সন্দেহ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। জেলা গুলো হচ্ছে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল জেলা।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে মঙ্গলবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে চিকিৎসক-নার্সসহ ২৮ জনের শরীরে যে করোনা পজেটিভ এসেছে বলে রেজাল্ট দেয়া হয়েছে সেটি সন্দেহজনক হওয়ায় আইইডিসিআর গ্রহন করেনি। যেকারণে ওই ২৮ জনের নমুনা পূনরায় সংগ্রহ করে যবিপ্রবি ল্যাবে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন অফিস পাঠিয়েছে। নমুনা গুলো বুধবার থেকে পরীক্ষা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

গত সোমবার ২৭ এপ্রিল থেকে যশোরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ লক ডাউন ঘোষনা করেন। লক ডাউন ঘোষনার পরও সামাজিক দুরত্ব নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পড়েন নানা সমস্যায়। গত ৯ এপ্রিল থেকে যশোর জেলা থেকে করোনা ভাইরাস সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনম সেন্টারে প্রেরণ করা হয়। ১৩ এপ্রিল প্রথম যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য কর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এর পর ওই উপজেলায় বুধবার ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৬জন, যশোর সদর উপজেলায় ১৮জন, কেশবপুরে ৯ জন, শার্শা উপজেলায় ৬জন, চৌগাছা উপজেলায় ১২ জন ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ জন ও ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে বলে যশোর সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহিন নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে,যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় বলেন, বুধবার যশোর সদরে যে ৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে এর মধ্যে একজন অত্র হাসপাতালের কর্মচারী বাকী তিনজন আইসোলেশনে ভর্তি ছিল। চারজনের মধ্যে কর্মচারীসহ তিনজনকে যশোর টিবি ক্লিনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েয়ে বাকী একজন সংবাদ কর্মীকে নিজ বাড়িতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনম সেন্টারে ল্যাব টেকনিশিয়ান মাসুদুর রহমান সকালে রিপোর্টে ২৬ জনের করোনা পজিটিভ আসার ঘোষনা দেন। পরে ব্যাপক যাচাইবাছাই করে ১১ জন নিশ্চিত করেন জিনোম সেন্টারের সদস্য ড. শিরিন নিগার।

মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে করোনা পজিটিভ কমে যাওয়া নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পরীক্ষা নিয়ে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে যশোর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন।