স্বামী হত্যার বিচার দাবি করায় বাদীকে ভিটে মাটি ছাড়া করলো নুরু বাহিনীর ক্যাডাররা

nuru muhuri

স্বামী হত্যার বিচার দাবি করায় মামলার বাদী লিলিমা বেগমকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে খুনিরা। প্রাণ ভয়ে শিশু কন্যাটির হাত ধরে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে স্বামীর ভিটে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বিধবা লিলিমা বেগম। বিষয়টি থানা পুলিশ হলেও কর্ণপাত করেননি থানার বড় কর্তা। অপরদিকে কৃষক হাশেম আলী হত্যা মামলার আইও চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই শাহাজাহান আসামীদের আটকের পরিবর্তে বাদীকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এ সবের পেছনে কলকাটি নাড়ছে হাশেম আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামী নুর ইসলাম ওরফে নুরু মহুরী।

যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক হাশেম আলীকে গত ১৫ জানুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নুরু গংরা। শুরুতে এই হত্যাকান্ডটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে খুনি চক্র। পরে লাশের ময়না তদন্ত রিপোটর্রে ভিত্তিতে নিহতের স্ত্রী লিলিমা বেগম বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় গত ২০ এপ্রিল ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে স্বামী হত্যার মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ৫ধারা – ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৩০২/৪২৭/১১৪/৩৪ বাংলাদেশ পেনাল কোড। মামলাটির তদন্ত ভার দেওয়া হয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জকে।

মামলার আসামীরা হচ্ছে ভাতুড়িয়া গ্রামের মৃত উসমান আলীর ছেলে নুর ইসলাম ওরফে নুরু মুহুরী, আয়নাল আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান, মৃত আকবার আলীর ছেলে মিন্টু, আবুল কাশেমের ছেলে কবিরুজ্জামান ওরফে কাজল, আব্দুস সামাদের ছেলে আতিয়ার ওরফে আতি খোকা, ওয়াজেদ ড্রাইভারের ছেলে আলামিন, মৃত লতিফ গাজীর ছেলে আহসান,নুর ইসলামের ছেলে ইসরাজুল, আব্দুল মান্নানের ছেলে বাপ্পী, মৃত উসমানের ছেলে ইউনুচ, হাশেম আলীর ছেলে রফিকুল, আব্দুস সালামের ছেলে রাজু, মফিজুর রহমান মিস্ত্রির ছেলে সোহেল, রবিউলের ছেলে ইমরান, মৃত ওমর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর, রওশন আলীর ছেলে আব্দুল গফ্ফার ও ইনামুল পিতা অজ্ঞাত।
ঘটনার এই পর্যায়েও পুলিশ একজন আসামীকেও আটক করতে পারেনি।

পুলিশের দাবি তারা আসামীদের আটকে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু বাদীর দাবি ভিন্ন। তার দাবি হচ্ছে পুলিশ ইচ্ছা করে এই মামলার আসামীদের আটক করছে না। বরং পুলিশ আসামীদের গড ফাদার নুরু মহুরীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বাড়তি ফায়দা লুটছে। যার কারনে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের চোখে তারা পলাতক।

এদিকে শুরু থেকে এই হত্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য নুরু মহুরী ও তার ক্যাডাররা বাদী ও তার ছেলে মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ দিন আগে মামলার আসামীদের স্ত্রী সন্তানরা বাদীর বাড়িতে হামলা করে। তারা মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে বদী ও তার মেয়েকে রাতে অন্ধকারে ঘরে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিতে থাকে এক পর্যায়ে নুরু মহুরীর স্ত্রীসহ অন্য কয়েকজন আসামীর স্ত্রী বাদী লিলিমা ও তার শিশু কন্যাকে মারপিট করলে কৌশলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি মিডিয়া কর্মীদের নজরে আসলে তারা বাদীকে এই ঘটনায় থানায় একটি জিডি করার পরামর্শ দেন। লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি বলে বাদী জানান। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাদী কোলের শিশু কন্যাটির হাত ধরে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন বলে নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে।

এক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই নুরু বাহিনী যশোর শহরের উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে চাঁচড়া, বর্মণপাড়া, ভাতুড়িয়া, নারায়রপুর, মাহিদিয়া, সাড়াপোলসহ গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এই নুরু বাহিনীর ক্যাডাররা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

মাছের ঘের দখল, অন্যের সম্পত্তি দখল থেকে শুরু করে বৈধ অবৈধ পন্থায় এই নুরু মহুরী ইতিমধ্যে ভাতুড়িয়া এলাকার ধনকুবের বনে গেছেন। তার অর্থ বিত্তের কাছে সবাই নতি স্বীকার করায় সেই এখন এই অঞ্চলের দন্ডমুন্ডের কর্তা বনে গেছে। যার কারনে স্বামী হত্যা বিচার প্রার্থনা করায় মামলার বাদীকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে তার ক্যাডাররা।
বাদীর আশংকা যে কোন সময় এই খুনিরা তার ছেলে, মেয়ে ও তাকে হত্যা করতে পারে। তাই তিনি অবিলম্বে খুনিদের আটক ও বিচারের জন্য পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একই সাথে তিনি এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনসহ প্রকৃত তদন্ত ও খুনিদের আটকের জন্য মামলাটি দ্রুত ডিবি পুলিশ বা পিবিআইকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।