যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক দৈনিক কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি কবি ফখরে আলমকে (৬০) চাঁচড়ার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ১৪ মে আছরবাদ যশোর জিলাস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি রবিউল আলম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির( মার্কবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের যশোর জেলা সম্পাদক তসলিমুর রহমান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক আহসান কবীর, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপুসহ যশোরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানাজায় অংশ নেয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে তিনি নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আট বছর ধরে তিনি ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি মা রওশন আরা বেগম, স্ত্রী নাসিমা আলম, কন্যা নাজিফা আলম মাটি ও পুত্র ফাহমিদ হুদা বিজয়সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে বিকাল সাড়ে চারটায় তাকে প্রেসক্লাব যশোরে আনা হবে। এখানে সাংবাদিক সহকর্মীসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো তাকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর গ্রামের বাড়ি চাঁচড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২য় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ফখরে আলমকে দাফন করা হয়।
ফখরে আলম ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তিনি ভারতের টাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ক্যান্সারের কারণে তিনি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।
ফখরে আলমের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত
কবি ফখরে আলম ১৯৬১ সালের ২১ জুন যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। মা রওশনআরা বেগম গৃহিনী। বাবা শামসুল হুদা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ১৯৭৭ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৭৯ সালে সরকারি এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮১ সালে ঐ কলেজ থেকে তিনি বিকম পাশ করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাংবাদিকতা : ছাত্র জীবনেই তিনি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮৫-৮৬ সালে ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক ‘রোববার’ পত্রিকায় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজের যশোর জেলা প্রতিনিধি পদে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন। পরে তিনি দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক যায়যায় দিন ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রকাশনা : ফখরে আলম শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কবিও ছিলেন। তার লেখা ৩৮টি গ্রন্থ রয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ডাকে প্রেম তুষার চুম্বন, তুই কনেরে পাতাসী, ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত খুলে ফেলি নক্ষত্রের ছিপি, ২০১৪ সালে প্রকাশিত এ আমায় কনে নিয়ে আলি নামে চারটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। এছাড়া শালপ্রাংশু (সম্পাদনা গ্রন্থ), এসএম সুলতান, দক্ষিণের জনপদ, আলোকিত নারী আঞ্জেলা গমেজ, দক্ষিণের মুক্তিযুদ্ধ, একজনই শরীফ হোসেন, রিপোর্টারের ডায়েরি, জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ, হাতের মুঠোয় সাংবাদিকতা, মা সকিনা, মহর এবং অন্ধকার সোনাগাছিয়া, সাগরদাঁড়ি থেকে হায়দ্রাবাদ, মলাট কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের জানা-অজানা, ত্রাহী মধুসূদন, সুন্দরবনের মানুষ, পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিবেদন, নীলপদ্ম, আম জনতার আম, রবীন্দ্রনাথের মোটরগাড়ি, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, টুঙ্গিপাড়া, খবরের নায়কেরা, যশোরের গণহত্যা, যশোরের ভাষা আন্দোলন, অবসরে, জানা অজানা বঙ্গবন্ধু, দুই বাংলার পুতুল নামের কয়েকটি ভিন্ন ধরনের গ্রন্থ রয়েছে।