দারুল আরকামের শিক্ষকদের কান্না

বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় প্রাথমিক স্কুল নেই সেসব এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকে তরান্বিত করতে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মসজিদভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মার্চে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকরা নিয়োগ লাভ করে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বেতন না পাওয়ায় দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে শিক্ষকরা। যা দেখার কেউ নেই।

সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদনকালে এ মর্মে সদয় নির্দেশনা প্রদান করেন, বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতিটি শিশুর জন্য প্রযোজ্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি স্টাডি করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে চূড়ান্তভাবে দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্যে দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে ইফার নিজস্ব সিলেবাস দ্বারা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে ২০২০ সালে এসে তা পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। শুরু থেকে প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের অধীনে থাকলেও বর্তমানে সেটাকে আলাদা করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ বছরও প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের সাথে জমা করা হলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় দারুল আরকামকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন। প্রকল্প দুটি আলাদা হলে মউশিক প্রকল্পটি চলতি মাসের ১১ তারিখ পাশ হলেও দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পটি ঝুলে গেছে।

এতে করে বেকায়দায় পড়েছে এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২০ জন শিক্ষক। এখানে ১ হাজার ১০ জন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বাকি ১ এক হাজার ১০ জন আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্বীকৃতির পর এটাই প্রথম সরকারি চাকরিতে কওমি আলেমদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা।

শুরুর দিকে বিষয়টি সবাই আনন্দের সাথে গ্রহণ করলেও বর্তমানে এটি নিয়ে চতুর্দিকে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ১ হাজার১০ টি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখের উপর শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে গত মাসের ২১ এপ্রিল “আমার সংবাদে” সংবাদ প্রকাশ হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোড়জোড় শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে একনেকের বৈঠক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে প্রকল্পটি পাশ করেন। তবে এ প্রকল্পে দারুল আরকাম না থাকাতে শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হওয়ার পঞ্চম মাসে এসে মউশিক প্রকল্পটি পাশ হলেও দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পটি ঝুলে যায়। প্রকল্প পাস না হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করেনি। কর্মরত এসব শিক্ষকদের প্রত্যাশা যে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি পাশ হবে।

এ বিষয়ে দারুল আরকাম শিক্ষক সমিতির মহাসচিব আনাস মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দারুল আরকাম মাদ্রাসাটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের বিষয়টাও প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন বলে আমরা আশা রাখছি। ইতিমধ্যেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি এবং জেনেছি তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আশা করছি আমাদের মানবিক জীবনযাপনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির পাশ করে দুই লাখের ওপর শিক্ষার্থীর অনিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কওমি শিক্ষক বলেন, “২০১৮ সালের ৫ মার্চ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় নিউজ হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ১ হাজার ১০ জন কওমি শিক্ষককে সরকারি চাকরি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমাদের চাকরিটা আসলে সর্বসাকুল্যে একটা সম্মানী ভাতা প্রদানে সীমাবদ্ধ।”

হতাশা চিত্তে তিনি আরও জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার সবাই সরকার কর্তৃক ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরি করি এই বলে কেউ ত্রাণ দিতেও নারাজ। এদিকে লজ্জায় আমরা কারও কাছে কিছু চাইতেও পারি না। আমি আশা করছি এসমস্ত হাফেজ আলেমদের দিকে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দিবেন।

দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটিতে কিছু ঝামেলা রয়েছে। যা আমরা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পটিতে সমস্যা থাকার কারণে আলাদা করা হয়েছে এবং নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগছে‌।

বিশেষ করে প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিবে সেটা উল্লেখ নেই। এরকম কিছু ঝামেলা রয়েছে। যা সাজিয়ে তারপর আবার জমা দেয়া হবে। জমা হলে প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখে তারপর অনুমোদন দেবেন বলে আশা করছি। সূত্র: আমার সংবাদ।