প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাননি ভারতীয় হাইকমিশনার

ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ চার মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না— এমন খবর নাকচ করেছে সরকারি সূত্রগুলো। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সতর্কতা উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৈঠক, সাক্ষাৎ কার্যত বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক মাসে বিদেশি কাউকে সাক্ষাৎ দেননি।

অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাতের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো অনুরোধই ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে করা হয়নি। তাই সাক্ষাতের অনুরোধে সাড়া দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্নও ছিল না। তাছাড়া করোনা মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রী ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ (সামাজিক দূরত্ব) বজায় রাখছেন। বিদেশিদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ, বৈঠক হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনার সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না, শেখ হাসিনার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোনালাপ এবং চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন—এ ধরনের অনেক প্রচারণা চলছে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো এসবকে স্বার্থান্বেষী মহলের ‘অপপ্রচার’ হিসেবে অভিহিত করে তা নাকচ করে দিয়েছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক মাসে ভারতীয় হাইকমিশনের অনেক অনলাইন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। গত সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীরা ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০টি রেল ইঞ্জিন হস্তান্তর কার্যক্রম দেখেছেন।

সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন নেই। তবে বিভিন্ন মহল থেকে যেভাবে নেতিবাচক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা চলছে সেগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ভারতীয় হাইকমিশনার আজ মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে উভয় পক্ষই সুসম্পর্কের কথাই বলেছেন।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাক্ষাৎই যেখানে চাওয়া হয়নি সেখানে দেওয়া না দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। এটি তৃতীয় পক্ষ, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার সৃষ্টি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি— এই দুই সরকারেরই পারস্পরিক সহযোগিতা, আস্থা, বিশ্বাস, সব উপাদান মিলে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চ মাত্রায় অবস্থান করছে। এই সম্পর্ক পারস্পরিক সমঝোতা, সংস্কৃতির, মানুষে মানুষে যোগাযোগ-সম্পর্ক, নাড়ির টান, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, সব কিছু মিলিয়ে। এই সম্পর্ক অনেকগুলো উপাদান দ্বারা পরিচালিত।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। মহান মুক্তিযুদ্ধে বহিঃশক্তি হিসেবে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা ভারতই আমাদের করেছে। এই সম্পর্ককে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুয়োগ নেই। প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ভারতের কূটনীতিকরা আনুষ্ঠানিক বা কখনো কখনো অনানুষ্ঠানিকভাবে দেখা-সাক্ষাৎ করতে চেয়েছে তখনই আন্তরিকভাবে বিবেচনা করে সাড়া দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতি। সারা বিশ্বে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সেখানে সামনাসামনি দেখা সাক্ষাৎ কার্যত শূন্যের কাছাকাছি। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু চলছে ভার্চুয়ালি।