ঈদে ‘মুক্ত’ খালেদার দেখা পাবেন না কর্মীরা!

khaleda
ফাইল ছবি

গত ২৫ মার্চ কারামুক্ত হয়ে গুলশানের বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া। টানা পাঁচ ঈদে অন্য সময়ের মতো সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত চারটি ঈদে কারাগারে থাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ হয়নি বিএনপি প্রধানের। গত ঈদুল ফিতরের আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলেও করোনাভাইরাসের কারণে তেমন কোনো কর্মসূচি রাখেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এবারের ঈদেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ হবে না খালেদা জিয়ার।

এছাড়া দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার নির্দেশনার বেড়াজালের কারণে শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতেও খালেদা জিয়া শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন না। তবে শুধুমাত্র দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সকালে শ্রদ্ধা জানাবেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পর থেকে ২৫ মাস কারাগারে ও কারা হেফাজতে হাসপাতালে কাটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিন। সে কারণে ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সুযোগ হয়নি তার।

এরপর ২০১৯ সালেও একইভাবে কারাগারে থাকার কারণে দুটি ঈদ কাটে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময় না করেই। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করা হয় খালেদা জিয়ার। মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় ওঠেন তিনি। এরমধ্যে ঈদুল ফিতর কেটে গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে যেসব শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তা হলো- নিজ বাসায় থাকতে হবে এবং বিদেশে যেতে পারবেন না। ফলে গত চার মাস তিনি বাসায়ই অবস্থান করছেন।

যদিও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার অনুমতির ব্যবস্থা করতে সরকারের সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করার গুঞ্জন রয়েছে। অবশ্য দলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।

দুই বছরেও বেশি সময় পর দলীয় প্রধান মুক্তি পাওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এলেও করোনার কারণে তার সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের সাক্ষাতেও ছিলো কড়াকড়ি। গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশের চিত্র পাল্টে যায়। যে কারণে ২৫ মার্চ মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেন খালেদা জিয়া। এই সময়ের মধ্যে কাউকে সাক্ষাৎ দেননি তিনি।

ওইসময়ে শুধু তার চিকিৎসক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন তার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তারা মূলত তার চিকিৎসার জন্যই বাসায় যাওয়া আসা করেন। এছাড়া তার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই-বোনের পরিবারের সদস্যরাই শুধু সাক্ষাৎ পেয়েছেন খালেদা জিয়ার।

বিএনপি প্রধানের মুক্তি পাওয়ার টানা ৪৮ দিন পর প্রথম সাক্ষাৎ পান দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১২ মে ও ১৪ জুন দুই দফা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল। এছাড়া খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। একবার সাক্ষাৎ পেয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

করোনা পরিস্থিতি এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। সুতরাং এ অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীরা এবার ঈদেও খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের কেউ শুভেচ্ছা সাক্ষাতের সুযোগ পেতে পারেন বলে জানা গেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার যেমন খুব উন্নতি নেই, তেমনি করোনা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি নেই। এই এই পরিস্থিতিতে কারণে এবারের ঈদেও তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন না।

গত ঈদুল ফিতরের দিনের মত এবারও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে ঈদের সময় পাশে থাকবেন বলেও জানান তিনি।

জিয়া চ্যারিটাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান। সরকারের নির্বাহী আদেশে গত ২৫ মার্চ তিনি ছয়মাসের জন্য মুক্তি পান।