করোনা প্রতিরোধে নাকের স্প্রে ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন সম্ভাবনা

করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য সারা পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আমেরিকা এবং ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা শুনাচ্ছেন এক আশ্চর্যজনক আশা জাগানিয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা।

সাধারণভাবে আমরা বুঝি ভ্যাকসিন মানে সিরিঞ্জ-ইঞ্জেকশন ইত্যাদি। কিন্তু না, তাঁদের ভ্যাকসিন গ্রহণ করা যাবে নাকের স্প্রে বা ক্যান্ডির মতো চুষে খেয়ে। চলুন জেনে নিই এ বিষয়ে বিস্তারিতঃ

কভিড-১৯ (SARS-CoV-2) যেহেতু শ্বাসযন্ত্রকেই প্রধানত আক্রমণ করে, তাই নাক দিয়ে যেন শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইতিপূর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং চীন নাকের স্প্রে আনার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইকেল স্কুপ ও তার টিম এবং ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপ কারোয়ান ও তার টিম গত মাসে এই সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ করে রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, অধ্যাপক ফিলিপ কারোয়ান তো ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছেন মাত্র এক মিলিয়ন ইউরো খরচ করলে এ বছরের মধ্যেই এই ভ্যাকসিন ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে। সেজন্য তারা ফ্রান্স সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও অধ্যাপক ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের পেটেন্টকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই ভ্যাকসিন বাজারে আনার জন্য ।

যেভাবে ওই ভ্যাকসিন কাজ করবে

আপনারা জানেন, করোনাভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের কোষের মধ্যে যে পথ (Lock) দিয়ে ঢুকে সেই প্রোটিনের নাম হল ACE2, আর যে চাবি (Key) দিয়ে এই Lock খুলে তার নাম হল স্পাইক প্রোটিন। আমি ইতিপূর্বে অনেকবারই লিখেছি স্পাইক প্রোটিন সম্পর্কে।

করোনাভাইরাসের মৌলিক উপাদান (আরএনএ) যে শক্ত খোলসের ভেতরে থাকে যাকে আমরা দেখি কদম ফুলের মতো, সেটাই হল স্পাইক প্রোটিন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উভয় টিমই তাঁদের ল্যাবরেটরিতে নকল (Artificial) ACE2 পেপটাইড তৈরি করেছে যেটা নাকের স্প্রেরের মাধ্যমে দেয়া হবে। যখন করোনাভাইরাস নাক দিয়ে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রের কোষে প্রবেশ করতে চাইবে স্পাইক প্রোটিন দিকভ্রান্ত হয়ে নকল ACE2 পেপটাইডকে টার্গেট করবে। ফলে করোনা ভাইরাস সুস্থ কোষকে সংক্রমণ করতে ব্যর্থ হবে।

যে কারণে এই ভ্যাকসিন অন্যদের থেকে আলাদা

প্রথমত এই ভ্যাকসিন স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে তৈরি করা সম্ভব। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ না করানোর কারণে শ্বাসযন্ত্র ব্যাতিত শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এই ঔষধ প্রবেশের সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। ফলে আশা করা হচ্ছে ভ্যাকসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হবে একেবারে সামান্য। তাছাড়া ডাক্তার বা নার্সের সাহায্য ছাড়া নিজেই এই ঔষধ গ্রহণ করা যাবে।

গবেষণাপত্র দুটি পড়তে ক্লিক করুন

https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.08.08.238469v1

https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.08.24.264077v1
লেখক: ডা. মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন

চিকিৎসা বিজ্ঞানী, টোকিও, জাপান