মণিরামপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার, হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় দু’যুবককে কুপিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ জাহিদ হাসান ওরফে মানিক (২৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পূর্বশত্রুতার কারণে এই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় যশোর সদরের চাউলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২২ অক্টোবর দুপুর সোয়া দুইটায় নিজ কার্যালয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেন।

তিনি বলেন, গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যারাতে মণিরামপুর উপজেলার উত্তরপাড়া এলাকায় খুন হন বাদল হোসেন (২২) ও আহাদ মোল্যা (২৫) নামে দু’যুবক। ক্লু লেস এই মামলায় পুলিশ প্রথমে ধারণা করেছিল মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ডিশ লাইনের কাজ সংক্রান্ত ঘটনায় এই হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ঘটনার রাত থেকেই পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। সেইসময় সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে ধরে আনা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ইনোসেন্টদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ধৃতদের মধ্যে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মানিকের নাম আসে। এরপর ডিবি পুলিশের ইনচার্জ সৌমেন দাশের নেতৃত্বে তাদের একটি টিম অভিযান চালিয়ে মানিককে আটক করা হয়। মানিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত বাদলের একটি মোবাইলফোন সেট এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মানিক এই ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সে পুলিশকে জানিয়েছে- বাদলের সঙ্গে প্রতিবেশী আহাদের নারীঘটিত বিষয়ে শত্রুতা ছিল। বাদল তার শত্রু হিসেবে আহাদকে খুন করানোর জন্যে তারই বন্ধু মানিককে ম্যানেজ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বসুন্দিয়া জয়ন্তা বাজার থেকে বাদলের মোটরসাইকেলে তারা তিনজন বের হয়। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল মানিক, মাঝে বসেছিল আহাদ এবং পেছনে বাদল। মণিরামপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাদল তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে আহাদের গলায় পোচ দেয়। আহাদ একটু শক্ত সামর্থ হওয়ায় বাদলের কাছ থেকে চাকুটি কেড়ে নেয় এবং তাকে আঘাত করে। মোটরসাইকেল পড়ে যাওয়ায় মানিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। আহাদের চাকুর আঘাতে বাদলের মৃত্যু হলে সে মানিককে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে মানিক দেখতে পায়, আহাদ ধীরে ধীরে মোটরসাইকেলের কাছে গিয়ে লাইট নিভিয়ে নিজেও পড়ে যায়। তখন মানিক সেখানে পৌঁছে এবং আহাদের কাছে থাকা চাকুটি নিয়ে তার বুকে পেটে আঘাত করে। এরপর তার কাছে থাকা বাদলের মোবাইলফোন সেট পাশের একটি পুকুরে এবং চাকুটি আরও কিছু দূরে একটি ধানক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার জানান, ধৃত মানিকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ডুবুরি দিয়ে ফেলে দেওয়া সেই মোবাইলফোন সেট এবং আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ধানক্ষেত থেকে চাকুটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজই তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোরের মণিরামপুরে খুন হন যশোর সদরের জয়ন্তা গ্রামের আক্তার গাজীর ছেলে বাদল এবং একই এলাকার লুকমান মোল্যার ছেলে আহাদ। এ ঘটনায় নিহত বাদলের মা আঞ্জুয়ারা বেগম মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর ১০/১৮১ (১৬.১০.২০২০)।