যেসব গ্রহাণু পৃথিবীর জন্য হুমকি!

গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েড হলো প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ নামক শ্রেণির সবচেয়ে পরিচিত বস্তু। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। এসব গ্রহাণু এক সময় প্রবল গতিতে পৃথিবীর অস্তিত্ব মুছে দিবে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা। এবার সত্যি সত্যি পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়বে গ্রহাণু অ্যাপোফিজ।

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন অ্যাপোফিস নামক এই গ্রহাণু নিচের গতি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে যার ফলে ২০৬৮ সালে ধাক্কা লাগবে পৃথিবীর সাথে।

জানা যাচ্ছে, ২০০৪ সালে প্রথমবার এই গ্রহাণুটি পরিলক্ষিত হয়। এরপর থেকেই দীর্ঘ এত বছর ধরে গ্রহাণুটির গতি-প্রকৃতির ওপর লক্ষ রেখে চলেছেন ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি বিজ্ঞানীরা। অবশেষে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পরে ডেভ থোলেন জানিয়েছেন ২০৬৩ সালেরও আগে ২০২৯ এর ১৩ এপ্রিল এই গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাবে। আপোফিস এতটাই কাছে চলে আসবে যে খালি চোখে দেখা যাবে বলে দাবি করছেন তিনি। যদিও সেই সময় পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

কিন্তু ২০৬৩ সালে কি হতে চলেছে তা নিয়ে বেশ শঙ্কিত বিজ্ঞানমহল। কারণ ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টন টিএনটি বিস্ফোরণের যে শক্তি নির্গত হয় এই গ্রহাণুর ধাক্কায় তেমনি শক্তি উৎপন্ন হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর তাই যদি পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ ঘটে তাহলে ধ্বংসের পরিমাণ হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমার ধ্বংস ক্ষমতার চেয়ে ৬৫ হাজার গুণ বেশি হবে।

অ্যাপোফিজ ৯৯৯৪২! সংখ্যাগুলো ন্যাশনাল এরোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওরফে নাসা-র হিসেব কষার সুবিধের জন্য। আমরা শুধু প্রাথমিক ভাবে নজর রাখব নামটার দিকে।

নাসা জানিয়েছে যে অ্যাপোফিজ গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে সূর্যের আলোর দ্বারা আকর্ষিত হয়ে। সূর্যের আলোর এক নিজস্ব গতিবেগ আছে। তা আমরা টের পাই না ঠিকই, কিন্তু সৌরজগতের অন্য বাসিন্দারা দিব্যি অনুভব করে থাকে। এই টানের সূত্রকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে ইয়ারকোভস্কি অ্যাক্লেরেশন। সেই টানেই আপাতত এই সময়ের অ্যাপোফিজ নতুন করে ক্যাওস বা মহাজাগতিক বিশৃঙ্খলা ঘটানোর লক্ষ্যে সুপ্রস্তুত! সে রয়েছে পৃথিবীর খুব কাছেই, নাসা-র ভাষায় বললে জাতিগত দিক থেকে সে নিয়ার আর্থ অ্যাস্টেরয়েড। ফলে, পৃথিবীর বিপদের আশঙ্কা আছে বই কি!

আর সে কথা যখন এই গ্রহাণু ২০০৪ সালে সুবারু টেলিস্কোপে জ্যোতির্বিদ ডেভিড জে টলেন এবং তার দল আবিষ্কার করেছিলেন, সেই সময়েই উল্লেখ করা হয়েছিল। তখন হিসেব বলেছিল যে অ্যাপোফিজ ৯৯৯৪২ পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে ২০২৯ সালে।

এটা ঠিকই যে ২০২৯ সাল আসতেও এখনও অনেকটাই দেরি! তবে নাসা তাদের সাম্প্রতিক হিসেবের মাধ্যমে নিশ্চিত যে ওই সময়ে এই গ্রহাণু আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে ইউনাইটেড নেশনস পেরিয়ে চলে যাবে। কিন্তু আসল বিপর্যয় ডেকে আনবে ২০৬৮ সাল। কেন না, ওই সময়েই না কি এই গ্রহাণুর পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর তা যদি হয়, তবে পৃথিবী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, আপাতত এ কথা বেশ জোর দিয়েই বলছে নাসা!