অবশেষে চলেই গেলেন সৌমিত্র

এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকার পর অবশেষে চলেই গেলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। খবর আনন্দবাজারের।

রবিবার দুপুর সোয়া বারোটায় প্রয়াত হন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বের বেলভিউয়ে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনো উন্নতি কখনো অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল-বন্দি সৌমিত্রর জীবন। এছাড়াও একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তার। তার জেরে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে শক্তিমান এই অভিনেতার। তবুও প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রপচার-সহ নানাভাবে অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।

কিন্তু শুক্রবার সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। তারপরই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে অনুরাগীদের মধ্যে।

রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর রবিবার সকাল থেকেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সৌমিত্রর পরিবারের লোকজন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও যান তারা। এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিনেতার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬০ বছরের বেশি সময় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি পেশাদার মঞ্চে অভিনয় করেছেন। কবি, আবৃত্তিকার ও নাট্য নির্দেশক হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন।

সৌমিত্রের বর্ণাঢ্য কেরিয়ার

১৯৫৯ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যাযের। তার আগে তিনি রেডিওর ঘোষক ছিলেন এবং টুকটাক মঞ্চে অভিনয় করতেন। সেখান থেকেই পরবর্তীতে প্রবেশ করেন চলচ্চিত্র জগতে। দীর্ঘ ৬১ বছরের কেরিয়ারের কতটি ছবিতে যে তিনি অভিনয় করেছেন তা বলা মুশকিল।

যেহেতু সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তি নির্মাতার হাত ধরে তিনি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন, তাই পরবর্তীতে আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ, অভিনয় দক্ষতা দিয়ে শুরুতেই তিনি সত্যজিতের মন জয় করে নিয়েছিলেন। যার ফলে এই নির্মাতার অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ সিরিজের বেশ কয়েকটি ছবিতে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল সৌমিত্রের।

প্রয়াত এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র হলো- অপুর সংসার, স্বরলিপি, শাস্তি, আগুন, বেনারসী, অভিযান, সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, বাক্স বদল, কাপুরুষ, মনিহার, কাচ কাটা হিরে, অঙ্গীকার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, বাঘিনী, পরিণীতা, অপরিচিত, চেনা অচেনা, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, এপার ওপার, অসতী, দেবদাস, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, মহাপৃথিবী, পাতালঘর, পামিতার একদিন ইত্যাদি।

এত এত ভালো কাজের যথাযথ পুরস্কারও পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্ম ভূষণে সম্মানিত করে। ২০১২ সালে তিনি পান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। এছাড়া ২০১৭ সালে ফ্রান্স সরকার সৌমিত্রকে দেয় লিজিওন অব অনার। একই বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার হাতে তুলে দেয় বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার।