ইসি নিয়ে ৪২ বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি বিএনপির ড্রাফট- বললেন তথ্যমন্ত্রী

hasan mahmud
ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিটি বিএনপির ড্রাফট বলে মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আজ রবিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টায় মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রগতিশীল ন্যাপ আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের কঠোর সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৪২ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী যাঁরা ইসির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষে কথা বলেন। তাঁদের কেউ কেউ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও। বিবৃতিটি বিএনপি অফিসে বসে ড্রাফট করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসি নিয়ে প্রশ্ন থাকলে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এভাবে বিবৃতি দিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক। দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা হতে পারে, সমালোচনা হতে পারে গঠনমূলক। কিন্তু বিএনপির মতো অন্ধের মতো সমালোচনা করেন এই বুদ্ধিজীবীরা।’

৪২ বুদ্ধিজীবীর উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গঠনমূলক সমালোচনা করুন। নতুবা আপনাদের বিবৃতিতে মানুষ অবাক হয়ে যাবে। দেশের লোকে বলবে, তাঁরা বিএনপির মতো অশিক্ষিত।’

সভায় বিএনপিরও সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাল দেখলাম বিএনপির মেজর হাফিজ যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাদের কোন্দল প্রকাশ পেয়েছে। মির্জা ফখরুল সাহেব, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে নিজের ঘরটা সামলান। যারা নিজের ঘর সামলাতে পারে না, তারা দেশ সামলাবে কেমন করে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, আজ পদ্মা সেতু হলো, বিএনপি নীরব। বিএনপির নেতারা পদ্মা সেতু হবে না, আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু বানাতে পারবে না বলে শুরুতে আওয়াজ তুললেও বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার সেটা বাস্তবায়ন করেছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এটি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিএনপি চুপসে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজ শুধু বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, তা নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উন্নতি হয়েছে, ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। প্রতিটি সূচকে আজ বাংলাদেশ পাকিস্তানের ওপরে। এমনকি কিছু সূচকে ভারতেরও ওপরে।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভাসানী এমন একজন মানুষ ছিলেন, যাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি কখনো ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতি করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে বঙ্গবন্ধুর বিকাশ ঘটেছে প্রথম জীবনে। বঙ্গবন্ধুর নেতারা যা বাস্তবায়ন করতে পারেননি, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেটা বাস্তবায়ন করেন।

সংগঠনের সভাপতি পরশ ভাসানীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, গণআজাদী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ সরওয়ার হোসাইন প্রমুখ।

গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে অভিযোগ করেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক চিঠিটি রাষ্ট্রপতির দপ্তরে জমা দেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হয়েছেন। কমিশনের সদস্যরা একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ; একইভাবে তাঁরা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধি-বিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন বলে আমরা মনে করি।’

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হচ্ছে : ১. ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বত্তৃদ্ধতা দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম; ২. নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চার কোটি আট লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম; ৩. নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম; ৪. ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম; একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম; ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম; খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম; গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম; সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম।