“জমিদারের লাঠিয়াল থেকে শ্রমিকশ্রেণির নিঃস্বার্থ নিবেদিত প্রাণ কমরেড হেমন্ত সরকার”

শ্রমিকশ্রেণির নিঃস্বার্থ নিবেদিত প্রাণ কমরেড হেমন্ত সরকারের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।

আজ সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় নড়াইলের বড়েন্দার গ্রামস্থ সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, শপথ গ্রহণ ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য হাফিজুর রহমান এবং আক্তার হোসেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নড়াইল জেলা সভাপতি আক্তার হোসেন, কৃষক সংগ্রাম সমিতি নড়াইল জেলা সভাপতি আহম্মদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের নড়াইল জেলা আহ্বায়ক ইয়াছিন বিল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যশোর জেলা সহ-সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাসের নেতৃত্বে, এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।

এ সময় প্রয়াত বিপ্লবীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিবেশন ও শপথ পাঠ করা হয়।

এরপর সমাধিস্থলে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য হাফিজুর রহমান ও কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু, মাগুরা জেলা সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান মাস্টার,নড়াইল জেলা এনডিএফের সভাপতি আক্তার হোসেন, যশোর জেলা সহ-সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, কৃষক সংগ্রাম সমিতি নড়াইল জেলা সভাপতি আহম্মদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির, যশোর জেলার সহ-সভাপতি আবু বক্কার সরদার, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য ও যশোর জেলা সভাপতি শাহরিয়ার আমির, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যশোর জেলার অভয়নগর থানার আহ্বায়ক প্রভাষক মনিরুল ইসলাম বাবু ও জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলার অন্যতম নেতা মধু মঙ্গল বিশ্বাস প্রমুখ। সভাটি পরিচালনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের অভয়নগর থানার নেতা নাজমুল হুসাইন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) যশোর জেলা সভাপতি নাজিম উদ্দিন।

সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রয়াত কমরেড হেমন্ত সরকার সমগ্র জীবন ধরে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনগণ মানুষের মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আমরা এমন এক সময়ে পালন করছি, যখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত; সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ-বিগ্রহ, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি ও উত্তেজনা; শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের আন্দোলন-সংগ্রাম বিদ্রোহ-বিপ্লব; করোনা পরিস্থিতিসহ নানান রকমের তোলপাড় চলছে।

কমরেড হেমন্ত সরকার ১৯১৬ সালে বড়েন্দা গ্রামে গরিব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভোরে নড়াইলে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জন্মভূমি নড়াইল সদর উপজেলার বড়েন্দা গ্রামে তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।

হেমন্ত সরকারের জীবনাদর্শ থেকে জানা যায়, দারিদ্রের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি তিনি। জীবনের প্রথম দিকে নড়াইলের প্রতাপশালী জমিদারদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে কাজ করতেন। পরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অমল সেনের সংস্পর্শে এসে মার্কসবাদের দীক্ষা নেন। পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করেন হেমন্ত সরকার।

চল্লিশ দশকে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার বলে প্রথমে পূর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) যশোর জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন হেমন্ত সরকার। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অপরিসীম ভূমিকা রাখায় তাকে প্রায় ৬০ বছর কারাগারে এবং আত্মগোপনে থাকতে হয়।