পি কে হালদারসহ পলাতকদের বক্তব্য প্রচারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) যেকোনো পলাতক আসামির বক্তব্য গণমাধ্যমসহ সব মাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এছাড়া আদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেল একাত্তরে গত সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রচারিত পি কে হালদারের সাক্ষাৎকার এবং মধ্যরাতে প্রচারিত টকশোর ভিডিও ক্লিপ তলব করেছেন উচ্চ আদালত। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দিতে টিভি চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) পি কে হালদারের মালিকানায় থাকা রাজধানীর ধানমণ্ডির দুটি ফ্ল্যাট ও রূপগঞ্জের প্রায় ছয় একর জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

গতকাল আদালতে খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে একজন পলাতক আসামির সাক্ষাৎকার প্রচার করা, এছাড়া তাদের রাতের টক-শোতেও ওই আসামিকে লাইভে এনেছে। আমাকেও সংযুক্ত করেছিল। আমি তাঁর কথা শুনে লাইভ থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমি তো পলাতক আসামির সঙ্গে টক-শো করতে পারি না। প্রথম কথা হলো, পি কে হালদার পলাতক, আর দ্বিতীয় হলো তার বিষয়ে এই আদালতে একটা সুয়োমোটো মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় তার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে কী আছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই আদালত সেই ভিডিও সাক্ষাৎকার তলব করে দেখতে পারেন। এরপর প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন।

এরপর আদালত লিখিত আকারে আবেদন করতে বলেন। সে অনুসারে বুধবার লিখিত আবেদন করে দুদক।

হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৯ নভেম্বর পি কে হালদারের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও দেশ থেকে পালানো প্রশান্ত কুমার হালদারকে গ্রেপ্তার করতে বা দেশে ফেরাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে স্বরাষ্ট্রসচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলার প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শিরোনামে গত ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুদক থেকে একটি প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। তাতে বলা হয়, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়েছে। ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এটা দেখার পর আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিচারককে (নিম্ন আদালত) বলবেন, এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

আদালত বলেন, ‘যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না। তারা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে, সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। যারা আইনের জালে আটকে যায় তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সবার উচিত হলো, দেশের সম্পদ রক্ষা করা। এটা শুধু কোর্ট করবেন অন্যরা করবে না, তা তো নয়। সবাইকে করতে হবে।’

পি কে হালদার নিরাপদে দেশে ফিরে যাতে আদালতের হেফাজতে যেতে পারেন সে জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আবেদন করে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)। আবেদনে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরতে চান। এই আবেদনে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ গত ২১ অক্টোবর এক আদেশে দেশের বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্র পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন, কিন্তু পি কে হালদার নির্ধারিত দিনে দেশে ফেরেননি।

এর আগে হাইকোর্ট গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি, বহুল আলোচিত পি কে হালদারসহ ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পি কে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পি কে হালদারসহ এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং তাঁদের গত পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সাতজন আমানতকারীর এক আবেদনে এই আদেশ দেন হাইকোর্টের কম্পানি আদালতের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।

এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএলের দুই পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এরই মধ্যে পি কে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে যান। এ অবস্থায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।