নির্বাচনী কর্মকর্তাকে চাপ : ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন গ্যাব্রিয়েল

trump

নির্বাচনের ফল পাল্টাতে জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মকর্তাকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের ঘটনায় তোলপাড় চলছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। এ ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ ট্রাম্পের এমন আচরণকে ‘স্রেফ পাগলামি’ বলছেন। জর্জিয়ায় রিপাবলিকান পার্টির এক নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেছেন, একজন প্রেসিডেন্ট এ ধরনের উদ্যোগ কখনই নিতে পারেন না। খবর আলজাজিরার।

জর্জিয়ায় ট্রাম্পের দলের নির্বাচনী কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়েল স্টারলিং বলেন, ফল পাল্টাতে ট্রাম্পের চাপ ‘অযথাযথ’ ও ‘অস্বাভাবিক’। কোনো রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্ট্যাটকে একজন প্রেসিডেন্ট এমন চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না– এটি বিরল ঘটনা।

জর্জিয়ার ভোট পদ্ধতি বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপক স্টারলিং সাংবাদিকদের আরও বলেন, জর্জিয়ায় আগামী দিনে নেতৃত্ব কে দেবে সেটি জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছেন। নেতা নির্বাচনের কর্তৃত্ব জনগণের রয়েছে। জর্জিয়ার নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগ ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন, সেটি সঠিক নয়।

এদিকে জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মকর্তাকে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার কথা বলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে এফবিআইকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এফবিআইকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির দুজন আইনপ্রণেতা।

কংগ্রেসের দুজন ডেমোক্র্যাট সদস্য টেড লিউ ও ক্যাথলিন রাইস ৪ জানুয়ারি এফবিআই পরিচালক ক্রিস ওরেই বরাবর পত্র দিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন বিচারের কোনো নজির নেই। প্রেসিডেন্ট ফেডারেল অপরাধ থেকে নিজেকে ক্ষমা করার ব্যবস্থা নিতে পারেন। যদিও কোনো অঙ্গরাজ্য আইনে তার অপরাধের দায় থেকে মুক্তি নেয়ার সুযোগ প্রেসিডেন্টের নেই।

প্রসঙ্গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ১১ হাজার ৭৭৯ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। শনিবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প ওই কর্মকর্তাকে যে কোনোভাবে ভোটের ফল তার পক্ষে দেখানোর অনুরোধ করেন। তবে ব্র্যাড ট্রাম্পের এ অনুরোধে সাড়া দেননি।

তাদের দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গত রোববার প্রথম প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ফোনালাপের সূত্র ধরে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেক্রেটারি অব স্টেটকে ১১ হাজারের বেশি ভোট কোনোভাবে খুঁজে বের করার জন্য বারবার বলছেন বলে ফোনালাপে শোনা যায়।

ট্রাম্প বলছিলেন, ‘আমি এ একটি জিনিসই চাইছি—কোনোভাবে ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করা।’ ট্রাম্পের এই চাওয়ার কারণ, তা হলে জো বাইডেনের চেয়ে এক ভোট বেশি হয়ে যাবে এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন, তা প্রমাণিত হবে। এমনিতেই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বলতে শোনা যায়, ট্রাম্প ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। রাজ্যের ভোট ঠিকই একাধিকবার গণনা করা হয়েছে। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় নতুন ভোট খুঁজে পাওয়ার কাজ যে তিনি করবেন না, এমন কথা বিনয়ের সঙ্গে বলেন ব্র্যাড রাফেনসপারজার।

ফোনালাপের একপর্যায়ে ওই নির্বাচনী কর্মকর্তাকে এক ধরনের ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টির লোকজন ব্র্যাড রাফেনসপারজারের ওপর অসন্তুষ্ট বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন ফোনালাপে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এমন ব্যবহার রিপাবলিকানরা নাকি মেনে নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ায় দুই সিনেট নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন। এখন যদি তার কথামতো সব ঠিক করে নেয়া হয়, রিপাবলিকান পার্টির নেতারা সেক্রেটারি অব স্টেটকে ‘খুবই শ্রদ্ধা’ করবেন বলে ট্রাম্প বলতে থাকেন।

জর্জিয়ার সিনেট পুনর্নির্বাচনের আগে আগে এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়াটা তাই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ফোনালাপ এত দিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠদের তরফ থেকে তোলা ‘ভোট জালিয়াতি’, ‘নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন’ প্রভৃতি অভিযোগকে রীতিমতো হাস্যকর করে তুলেছে।

উল্লেখ্য, ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেন ইলেকটোরাল ও পপুলার ভোটেও জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প এখনও তাকে মেনে নেননি। ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনকে প্রত্যয়ন করার কথা রয়েছে মার্কিন পার্লামেন্টে। ২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ নেয়ার কথা রয়েছে।