গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় মারধরের অভিযোগে মামলা

mamla rai

যশোর জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনসহ চারজনের নামে গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় মারধরের অভিযোগে মামলা করেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী৷

মঙ্গলবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মিলনের দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া খাতুন।

আসামিরা হলেন, শহরের পুরনো কসবা কাঁঠালতলা এলাকার মৃত শেখ রুস্তম আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা জাহিদ হোসেন মিলন ও প্রথম স্ত্রী সাথী বেগম, মেয়ে অন্তরা ও পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল হোসেন। বাদীর অভিযোগ, ১৩ বছর আগে জাহিদ হোসেন মিলন নড়াইল সদরের খাশিয়াল গ্রামের মোল্লা ইউনুস আলীর মেয়ে সোনিয়াকে বিয়ে করেন। সোনিয়া জানতেন না তার স্বামীর আরও এক স্ত্রী আছে। তবে বিয়ের দুই বছর পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামীর শুধু স্ত্রী নয়, সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর তার স্বামী বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ভাড়া করে তাকে সেখানে রেখে দিতেন। আর মাঝে মধ্যে স্বামী বাসায় তার কাছে যেতেন।বর্তমানে তিনি পুরাতন কসবা কাঁঠালতলায় আবদুস সালাম চাকলাদারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওই বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। এরই ২০০ গজ দূরে তার স্বামীর নিজস্ব চারতলা বাড়ি রয়েছে। সেখানে স্বামীর প্রথম স্ত্রী ও সন্তান বসবাস করেন। কিন্তু তার স্বামী কখনও ওই বাড়িতে তাকে নিয়ে যেতেন না। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে তার স্বামী তাকে যশোর সার্কিট হাউসের সামনের ল্যাবএইড হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল সার্ভিসে নিয়ে যান। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর চিকিৎসক তাকে জানান, তিনি এক মাস দুই দিনের গর্ভবতী। পরে বাসায় ফেরার পথে তার স্বামী জাহিদ হোসেন মিলন তাকে গর্ভের সন্তান মেরে ফেলার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখান। কিন্তু তিনি স্বামীর এই প্রস্তাবে কখনও রাজি হননি।

এরই একপর্যায়ে গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে মামলার ৪ নম্বর আসামি উজ্জ্বল হোসেন তার বাসায় যান এবং তাকে স্বামী জাহিদ হোসেন মিলনের নিজস্ব বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। উজ্জ্বল হোসেনের সঙ্গে সঙ্গী আরিফ হোসেনসহ স্বামী জাহিদ হোসেন মিলনের বাড়িতে যান। চারতলার তৃতীয় তলায় গিয়ে সেখানে তিনি তার স্বামী জাহিদ হোসেন মিলন, প্রথম স্ত্রী সাথী বেগম ও মেয়ে অন্তরাকে দেখতে পান। তারা এ সময় তাকে গর্ভের সন্তান মেরে ফেলার জন্য ভয়ভীতি দেখালে তিনি এতে রাজি হননি। এ কারণে সাথী বেগম ও তার মেয়ে অন্তরা তাকে চড় থাপ্পড় ও লাথি মারেন। চুলের মুঠি ধরে তাকে টানাহেঁচড়া করেন এবং লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ ছাড়া তারা একাধিকবার তার তলপেটে আঘাত করার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গী আরিফ হোসেন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করা হয়।এর পরও গর্ভের সন্তান মেরে ফেলতে রাজি না হলে স্বামী জাহিদ হোসেন মিলন এবং আসামি উজ্জ্বল হোসেন তার হাত ও চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে সিঁড়িতে নিয়ে আসেন। তখন তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করলে তারা তাকে ছেড়ে দেন এবং গর্ভের সন্তান নষ্টে তাদের কথা রাজি না হলে তাকে খুন জখমের হুমকি দেয়া হয়। অবশেষে তিনি এ ব্যাপারে মামলা করেছেন।

এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি দুবাই থেকে ফেরার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন জাহিদ হোসেন মিলন। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার যুবলীগকর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যায় তিনি অভিযুক্ত। এই হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিলনের নাম এসেছে এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। এ মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলায় জড়িত টাক মিলন। তার নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।