৫ ঘন্টা পর বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি চালু

বেনাপোল বন্দরে চোরাচালানে সহযোগিতার অভিযোগ এনে কাস্টমস কর্তৃক এক সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যকে লাঞ্ছিত, কার্ড বাতিল ও মামলা প্রক্রিয়াসহ দশ দফার দাবিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়ার ৫ ঘন্টা পর চালু হয়েছে।

সারাদিন বন্ধ থাকার পর সন্ধ্যার দিকে আমদানি রফতানি ফের চালু হয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সকাল ১১ টার সময় আমদানি রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় প্রবেশের অপেক্ষায় বন্দরের দুই পাশে শ শ ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প কলকারখানার কাঁচামালসহ খাদ্য সামগ্রী।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১১ টা থেকে বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশনের সদস্যরা কর্মবিরতি ডাক দিয়ে কাস্টমস কার্গো শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

এদিকে কাস্টমসের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়ে কাস্টমস হাউজের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে। তারা বলেন, করোনাকালিন সময়ে আমাদের বর্ডারম্যানরা ভারতে প্রবেশ করতে পারেন না। ভারতীয় এক্সপোর্টাররা ও ট্রাক ড্রাইভার হেলপাররা আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। সেক্ষেত্রে পণ্য আনলোডের পূর্বে কিভাবে বর্ডারম্যানরা বুঝবে তাতে অবৈধ মালামাল আছে কিনা। আর সেক্ষেত্রে কেনইবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সদস্যদের পারমিট কার্ড কেড়ে নেবে, নানা ভাবে হয়রানিসহ পারমিট লাইসেন্স বাতিল করার হুমকি দিবে।

তারা আরো বলেন, কাস্টমস হাউজের প্রত্যেকটি শুল্কায়ন শাখা ও পরীক্ষণ শাখায় অসংখ্য এনজিও কর্মি রয়েছে। তারা কাস্টমস অফিসারদের বিভিন্ন রকম ভুল বুঝিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্টস সদস্যদের হয়রানিসহ বাড়তি উৎকোচ দাবি করেন। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাস্টমস অফিসাররাও সিএন্ডএফ এজেন্টস সদস্যদের সাথে অসদাচরণ করে থাকেন। আমরা ২৪ ঘন্টা সরকারি রাজস্ব আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখি। তাহলে কেন আমাদের সাথে এ আচরণ। আমাদের তো সরকার কোন বেতন ভাতা দেয় না। তারপরও রাজস্ব আদায়ে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকি।

ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান এন্ড সন্স নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্টাফ সদস্য আক্তারুজ্জামান আক্তার জানান, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে কয়লা বোঝাই একটি ট্রাক যখন ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে তখন আমি বর্ডারের কার্গো শাখা থেকে ওই পণ্যের মেনিফেস্ট নাম্বার ও ইনভয়েস তুলে বাড়িতে চলে আসি। পরবর্তীতে রাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা আমাকে ফোন করে বন্দরের ট্রাক টার্মিনালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি একটি ট্রাক থেকে ফেনসিডিল ও আমি যে ট্রাকটির কাগজপত্র তুলি সে ট্রাকটি থেকে ওষুধ উদ্ধার করে। সে সময় কাস্টমস কর্মকর্তারা আমার কাছ থেকে কাস্টমস পারমিট কার্ডটি নিয়ে নেয় এবং ট্রাকসহ আমাকে নিয়ে কাস্টমস হাউজের মধ্যে আসে। পরে তারা একটা কাগজে আমার সই নিয়ে কাস্টমস কার্ড নিয়ে রাত ১২ টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলে অবৈধ পণ্য আনার অপরাধে আমার নামে মামলা হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমাকে আটক করে আমার পারমিট কার্ড কেড়ে নিয়ে, কাগজে আমার সই নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ড্রাইভারকে আটক না করে কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো? আর এ অবৈধ মালামালের জন্য আমি কেন দায়ী হবো ? সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান তিনি।

সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, পণ্য আসে ভারত থেকে। ট্রাকে অবৈধ পণ্য আনে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত জোর করেই সিএন্ডএফ এজেন্ট ও সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারিকে দায়ী করে চলেছেন। এর সাথে কোন সিএন্ডএফ এজেন্ট এর মালিক বা কোন স্টাফ জড়িত থাকতে পারে না। এটা কোন ভাবে গ্রহনযোগ্য না। তবে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

রবিবার থেকে বন্দর ও কাস্টমস যৌথ ভাবে চেকপোস্টে ভারতীয় ট্রাক তল্লাশি করে ছাড় দিবে। এর ফলে আমাদের আর কোন দায় দায়িত্ব থাকবে না।

এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, আমদানিকারকরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেন। পণ্য বোঝাই ট্রাক গুলি আমরা বাংলাদেশে আসার পরে গ্রহণ করি। এসব পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতের পেট্রাপোলে পার্কিংয়ে আসার পর ড্রাইভার হেলপার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসব ড্রাইভার ও হেলপাররা চোকারবারীদের সাথে যোগসাজশ করেই অবৈধ পণ্য ট্রাকে তুলে নিয়ে আসে। এসব অবৈধ কাজের সাথে কোন সিএন্ডএফ এজেন্ট বা কোন স্টাফ জড়িত থাকতে পারেনা। কাস্টমস জোর করে সিএন্ডএফ এজেন্টকে দায়ী করছেন। আমরা আমদানীকৃত পণ্যগুলি কাস্টমস থেকে ছাড় করিয়ে সরকারের রাজস্ব আহরনে সহায়তা করে থাকি।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো: নেয়ামুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি ভারতীয় বৈধ আমদানি পণ্যের ট্রাকের সাথে কিছু অবৈধ মালামাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে অভিযান চালাই। এসময় ভারতীয় তুলার ট্রাক থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল ও কয়লার ট্রাক থেকে কিছু ভারতীয় ওষুধ উদ্ধার করি। এই কয়লার ট্রাকের বর্ডারম্যান আক্তারুজ্জামান আক্তারকে আটক করে তার কার্ড সিচ করে নেওয়া হয়েছে। এবং এই কর্মচারি কার্ড সিচ করে নেওয়ার কারনে সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি আরো জানান এ ঘটনায় নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। এবং ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল স্থলবন্দরের টিটিআই টার্মিনাল থেকে ২০০ বোতল ফেন্সিডিল ও বিভিন্ন প্রকার ওষুধ জব্দ এবং ভারতীয় একটি ট্রাক আটক করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ সময় ট্রাক চালক পালিয়ে যায়।