খুলনায় বিএনপির সমাবেশ : ‘আর কদিন পর বলবে জিয়া বাংলাদেশের নাগরিকই নয়’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়। তারা কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনেই জিততে পারেনি। ১৯৭৩ সালে বাকশাল, ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইন, ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৮ সালে তো ভোটই হয়নি। তাই তাদের কাছে কোনো দাবি নেই। দাবি আমাদেরই আদায় করতে হবে। এই দলটি ব্যাংক লুটের দল, ধর্ষকের দল, ইয়াবা ও ক্যাসিনোর দল।’

গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলের বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান ওমর আরো বলেন, ‘রাজাকাররা আওয়ামী লীগ করলে বিরাট মুক্তিযোদ্ধা, আর না করলে রাজাকার। তাই তারা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করতে চায়। আর কিছুদিন পর তারা বলবে, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের নাগরিকই নয়। তারা নাগরিকত্ব বাতিল করবে, এটা আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব।’

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এ কারণে খুলনার মহাসমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। সব সিটির ভোট চুরি প্রকাশ্য হয়ে যাবে বলে এখানকার আওয়ামী লীগ নেতারাও জনসভা চাননি। এতে জনগণের কাছে তাঁদের সব কিছু উন্মোচিত হয়ে যাবে। তাঁরা সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র হরণ করে নিকৃষ্টতম দেশে পরিণত করেছেন। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য লড়াই করতে হবে।

বিএনপি নেতারা বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে থাকতে হতো না। তারেক রহমানকে দেশের বাইরে থাকতে হতো না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। বক্তব্য দেন বরিশাল সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মজিবর রহমান সরোয়ার, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

খুলনা অবরুদ্ধ নগরী, ভোগান্তি : ‘মানুষের কষ্টের জন্যি নৌকার বৈঠা ধরছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোন কথাই শুনল না। শুধু শুধু মারপিট করল। আয় না করলি খাব কী। কেউ তো আর চাল-ডাইল কিইনে দেবে না। আমাগেই কষ্ট করতি হবি।’ এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন খুলনার রূপসার সেনের বাজার ঘাটের মাঝি মো. আকবর আলী (৪৮)।

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় মহাসমাবেশ ঘিরে খুলনার নৌপথ বন্ধের পর ভৈরব নদের সেনের বাজার থেকে নৌকা ছাড়তে গেলে পুলিশ এই মাঝিকে মারধর করে। তাঁর নৌকার বৈঠা কেড়ে নেয়। কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে গতকাল পুরো খুলনা ছিল এ রকম অবরুদ্ধ পরিস্থিতি। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। আকস্মিক বাস-ট্রাক বন্ধ এবং ইজি বাইক-মাহিন্দ্রা সীমিত চলাচল করায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকাল থেকে অনেক যাত্রী সোনাডাঙ্গার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে বাসায় ফিরে যায়। লোক নিয়ে কোনো ইজি বাইক বা অটোরিকশা শহরের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। এ ছাড়া সকাল থেকে খুলনা নগরে ঢোকার সব পথ অনেকটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনা থেকে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বাস মালিক সমিতি।

রূপসার বাসিন্দা খায়রুল আলম বলেন, ‘রূপসা থেকে নদী পার হয়ে শহরে আসার চেষ্টা করেছি; কিন্তু কোনোভাবেই নৌকায় পার হতে পারিনি। পরে ব্রিজ ঘুরে কোনোভাবে খুলনা এসেছি। মানুষ যাতে ঘাট পার না হতে পারে এ জন্য বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।’ দুুপুরে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসা সাহিদা বেগম ও আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে যাব বলে এসেছিলাম। এসে শুনি বাস বন্ধ। তাই আবার বাসায় ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু আজ (শনিবার) ইজি বাইকও কম। তাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের এক নেতা বলেন, ‘আমরা তিন-চারটি মোটরসাইকেলে মহাসমাবেশে আসছিলাম। কিন্তু জিরো পয়েন্টে পুলিশ আমাদের ঢুকতে দেয়নি। তাই ঘুরে অন্য পথ দিয়ে সমাবেশে এসেছি।’

এদিকে বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে মহানগরীর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পিকচার প্যালেস, কে ডি ঘোষ রোড, হেলাতলা কার্যত অবরুদ্ধ ছিল। সকাল থেকেই পুলিশ ওই সব এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। বিএনপি সমাবেশের জন্য নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক, শহীদ মহারাজ চত্বর, সোনালী ব্যাংক চত্বর ও শিববাড়ী মোড়ের যেকোনো একটি বরাদ্দ চাইলেও পুলিশ দেয়নি। দুপুরের দিকে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মৌখিকভাবে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে তার আগে থেকেই পুলিশ ওই এলাকায় দলটির নেতাকর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয়। সমাবেশস্থলটি খুলনা সদর থানা এলাকা হলেও সেখানে বিভিন্ন থানার ওসিদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সমাবেশের অদূরে পুলিশি হামলার মুখে পড়েন বাগেরহাট ছাত্রদলের সদস্য মো. ইব্রাহিম।

খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, বিএনপিকে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরে কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কর্মীরা এসে ফিরে গেছেন। তাঁদের পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। পুলিশ পুরো খুলনা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।’