নন্দীগ্রামে মমতার গাড়িবহরকে ঘিরে বিজেপি নেতাকর্মীদের কাণ্ড! (ভিডিও)

momota

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের অসংলগ্ন আচরণের মধ্যে পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িবহরকে ঘিরে ‌‌‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে ভিন্ন রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

মঙ্গলবার সকালে প্রথমে রেয়াপাড়ার কাছে এই ঘটনা ঘটে। পরে মোহাম্মদ বাজার এলাকাতেও একই কাণ্ড ঘটনা ঘটে।

ওই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, কিছুক্ষণ পর ওই এলাকাতেই পদযাত্রা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার জন্য সকাল থেকেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল রাস্তায়। তারাই ওই ধ্বনি দেন। এ ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে সাময়িকভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এবং মমতার নিরাপত্তারক্ষীরা এ পরিস্থিতি সামাল দেন। তবে পরে সোনাচূড়ার সভায় দলীয় কর্মীদের মাথা ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দেন তৃণমূল নেত্রী।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন নন্দীগ্রামে। সেখানে মমতা খোদ তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে সেখানে বিজেপি-র প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে প্রচারের জন্য রবিবার থেকে সেখানে রয়েছেন মমতা। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে রেয়াপাড়া থেকে নন্দীগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। তখনই তাঁর গাড়ি ও কনভয় ঘিরে বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেন বলে জানা গিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, নন্দীগ্রামমুখী রাস্তার এক পাশে সারি সারি লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর এক দিক দিয়ে মমতার কনভয় বা গাড়িবহর এগিয়ে চলেছে। আর তার পিছনে পদ্ম-পতাকা হাতে নিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে চলেছেন এক দল লোক। তাদের কারও মাথায় গেরুয়া টুপি। কারও মাথায় আবার বাঁধা গেরুয়া ফেট্টি। কয়েক জনের হাতে আবার অমিত শাহ’র ছবিসহ ‘এ বার আসল পরিবর্তন, এ বার বিজেপি’ লেখা পোস্টারও দেখা যায়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দিতে কনভয়ের পিছনেও ছুটছেন কয়েকজন। আবার রাস্তা বরাবর বিজেপির পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেকে। মমতার কনভয়ের উদ্দেশে পতাকা নাড়াচ্ছেন তারা। গোটা ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। গাড়ি থেকে নেমে এসে কনভয়ের পিছনে দৌড়তে থাকা গেরুয়া জামা পরিহিত লোকজনকে আটকান মমতার নিরাপত্তারক্ষীরা। এগিয়ে আসে পুলিশও।

তবে সে যাত্রায় কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও, মোহাম্মদবাজারে কনভয় পৌঁছলে, সেখানেও মমতাকে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠে। টেঙ্গুয়া হয়ে সোনাচূড়ার দিকে যখন কনভয় এগোচ্ছিল, তাঁর কনভয়কে ঘিরে ধরে ধ্বনি দিতে থাকেন একদল গেরুয়া কর্মী ও সমর্থক। তবে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরাই পরিস্থিতি সামাল দেন। সেখান গাড়িতে চেপে সটান বেরিয়ে যান মমতা।

পরে সোনাচূড়ার সভায় দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। থাকবেন আপনারাই, আর আপনাদের দেখতে থাকবে রাজ্য পুলিশ। ভিন্ রাজ্যের পুলিশ অত্যাচার করছে। ভোট শেষে ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশ থাকবে না। আর পাণ্ডাদের কীভাবে বের করে দিতে হয় তা বাংলার মানুষ ভালোভাবেই জানে।’

মমতাকে ঘিরে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে নৈহাটি যাওয়ার পথে একই ভাবে মমতার গাড়ির সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন একদল লোক। সেই সময় মেজাজ হারান মমতা।

নৈহাটির সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘গাড়ির সামনে কয়েক জন এসে গালিগালাজ করছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা যেত। লোকগুলোকে চিনে রেখেছি। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। বাইরে থেকে এসব কালচার তুলে আনা হচ্ছে। তোমার কালচার তুমি করো। আমার কালচার আমি করব। তুমি কে হরিদাসের দল? বাংলাটা বাংলাই থাকবে। এখানে আমরা ‘জয় হিন্দ’ বলব, ‘জয় বাংলা’ বলব।’’

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে আরো বলা হয়, সেই সময় মমতা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে ‘গালি’ বলে উল্লেখ করায় গেরুয়া শিবির থেকে কটাক্ষ করা হয়। এ বছর নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিতিতে মমতা মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠলে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ভেসে আসে। তাতে বক্তৃতা না করেই মঞ্চ থেকে নেমে যান মমতা। একজন মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে এই ধরনের ধ্বনি তোলা নিয়ে সে সময় প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।