ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের কামাররা

আর দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে পশু কোরবানির জন্য দা, বটি, ছোরা ও চাকুর চাহিদা থাকে। সেই চাহিদার জোগান দিতে প্রতিবারের মতো এবারও যশোরের কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কিন্তু করোনার কারণে ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও আজও বেচাকেনা জমে ওঠেনি। এতে কামাররা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এদিকে এসব জিনিসপত্র তৈরির উপকরণের দাম বেশি, তার ওপর বেচাকেনাও নেই। অনেকে সংসার চালাচ্ছেন ধারদেনা ও কিস্তি করে।

সবমিলিয়ে করোনাকালে বিপাকে পড়েছেন কামাররা। উপশহর বিআর টিসি বাসস্ট্যান্ড ও ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বসেন পাঁচ-ছয় জন কামার। বিভিন্ন লোহার তৈরি চাকু, ছোরা, বটি ও দাসহ কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন।

যশোর শহরে এসব পণ্যের একাধিক দোকান রয়েছে। যেখানে লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিস কামারদের কাছ
থেকে পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করা হয়। এবারও তারা বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত বেচাকেনা জমে ওঠেনি।

উপশহর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডের সামনে কামার কুজো কর্মকার বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য আর আগের মতো নেই। এই কঠিন সময়ে দিন চলাবো কীভাবে চিন্তায় পড়ে গেছি। এদিকে জিনিসপত্র যে তৈরি করবো, কয়লার দাম বেশি। আগে এক ডালি কয়লার দাম ছিলো ২০ টাকা। এখন সেই কয়লা দাম বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।

তারপর ঠিকমতো পাওয়াও যাচ্ছে না। আগেকার মতো আর আয়-রোজগার নেই। সংসার চলবে কেমন করে।
অন্যান্য বছর কেরবানির ঈদের সময় ভালো কাজকর্ম হয় কিন্তু এবার করোনা-লকডাউনের কারণে অবস্থা খুবই খারাপ।

আরেক কামার কৃষ্ণ কর্মকার বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে ঘিরে চাকু, ছুরি, দা ও বটির বেশ চাহিদা থাকে। কিন্তু ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত তেমন বেচাকেনা নেই। করোনার কারণে মানুষজন
তেমন একটা বাজারে আসছে না।

তার উপর অর্ধেক মাস ধরে লকডাউন চললো তাতে একেবারেই মানুষজন নেই। বাজারে যদি মানুষজন না
আসতে পারে তাহলে তারা জিনিসপত্র নেবে কি ভাবে। আমরা কাজ করবো কি ভাবে। আমরা গরিব মানুষ কেমন করে চলবো।

বেচাকেনা না থাকায় কামাররা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে গরুর হাট ঠিকমতো বসছে না। মানুষজন গরু ছাগল কিনতে না পারলে কোরবানি দেবে কীভাবে। আর আমাদের কাজ হবে
কীভাবে । অন্যান্য বছর ঈদের আগে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার কাজ হয়।

এবার অর্ধেক কামাই করা মুশকিল হয়ে যাবে। আগে যেখানে দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকার কাজ হতো, এখন সারা দিনে দেড় থেকে দুইশ টাকার কাজ হচ্ছে। এখন এই টাকা দিয়ে কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, আর কীভাবে সংসার চালাবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

মানুষজন এখন কিছু আসছে যারা তাদের পুরনো বিভিন্ন চাকু-বটি ধার দিয়ে নিচ্ছে, যা প্রকার ভেদে ১০ থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। ঈদের বাকি দুদিন যদি বাজারে মানুষজন আসে বেচাকেনা যদি বাড়ে তাহলে হয়তো কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারবো।