কাবুলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ-গোলাগুলি, নিহত ৬

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন বেসামরিক নাগরিক ও তিন হামলাকারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার নিরাপত্তা বেষ্টিত গ্রিন জোন এলাকার পাশে এ ঘটনা ঘটে।

একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্যের বাড়ির পাশে গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়।

হামলার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মদি জানান যে, তার ও তার পরিবারের কেউ এ হামলায় আহত হননি। তবে তার কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী আহত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিরওয়াইস স্টেনিকজাই বেলন, প্রথম বিস্ফোরণের পরেই বন্দুকধারীরা এই এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় তিন হামলাকারী নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্টেনিকজাই।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পরই পুলিশ অভিযান শুরু করে। ওই এলাকার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব হামলাকারীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হয়েছে।

গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আরেকটি জোরালো বিস্ফোরণে কাবুলের একই এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপরই ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়।

কাবুল পুলিশ প্রধানের মুখপাত্র ফেরদাউস ফারামারজ বলেন, এলাকার শত শত বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। আরও হামলাকারী ওই এলাকায় লুকিয়ে থাকার আশঙ্কায় নিরাপত্তারক্ষীরা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দস্তগীর নাজারি জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১০ জন হতাহত হয়েছে। তাদের রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। যদিও কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে এর দায় স্বীকার করেনি।

আফগানিস্তান জুড়ে তালেবানদের সহিংসতা বৃদ্ধির মধ্যেই কাবুলের সবচেয়ে সুরক্ষিত অঞ্চলগুলোর একটিতে এই হামলা চালানো হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর তালেবানরা বড় শহরগুলোতে হামলা শুরু করেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক জেমস বে কাবুল থেকে জানিয়েছেন, এসব হামলা কাবুলের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। কাবুলের কেন্দ্রে যা ‘রিং অফ স্টিল’ নামে পরিচিত, সেখানে সব ধরনের চেকপয়েন্টও রয়েছে। বিস্ফোরণস্থলের কাছেও এ ধরনের একটি চেকপয়েন্ট রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি তালেবানদের বৈশিষ্ট্য বহন করে। আফগানিস্তান সম্পর্কে ওয়াশিংটনের অনেক উদ্বেগের মধ্যে একটি হলো দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

হামলার শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র শাহর-ই-নওয়ের প্রধান রাস্তাগুলো যানবাহনে পূর্ণ ছিল, কারণ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। হামলার পর গোটা এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে।

বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যে কাবুলের শত শত নাগরিক ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তার আফগান বাহিনীর পক্ষে এবং তালেবানদের বিরোধিতা করে মিছিল করেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদক জেমস বে জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও সাবেক সেনাপ্রধান।

গত মে মাসের শুরুর দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর দেশটির বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।

বর্তমানে তালেবান প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর দখলের দিকে মনযোগ দিয়েছে। কিন্তু প্রাদেশিক রাজধানী দখলের অভিযান চালাতে গিয়ে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে তালেবান যোদ্ধাদের।

দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহতে তীব্র লড়াই চলছে। ওই এলাকায় কঠোর অভিযান শুরু করতে অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকারি বাহিনী।

লস্কর গাহ তালেবানদের দখলে গেলে তা সরকারি বাহিনীর জন্য একটি বড় কৌশলগত পরাজয় হবে। আফগান বাহিনী গ্রামীণ বহু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর কৌশলগত কেন্দ্রগুলো রক্ষার অঙ্গীকার করেছে।

সূত্র : রয়টার্স ও আলজাজিরা