শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জির ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৮ আগস্ট)। ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শুভ্রা মুখার্জি।

শুভ্রা মুখার্জির জীবনী থেকে জানা যায়, ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুভ্রার শৈশবের প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে নিজবাড়িতে (পিত্রালয়) কাটলেও পরবর্তীতে মামাবাড়ি তুলারামপুরে চলে যান।

মামাবাড়ি থেকে স্থানীয় চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৫৫ সালের দিকে মায়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় চলে যান শুভ্রা।

নয় ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। পরবর্তীতে তার অন্য ভাই-বোনেরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করেন শুভ্রার ভাই কানাই লাল ঘোষ।

এদিকে, শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন তুলারামপুর গ্রামে। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে ‘গীতা ঘোষ’ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন শিক্ষক। গাইতে পারতেন রবীন্দ্রসংগীতও।

শুভ্রা মুখার্জি লিখেছেন ‘চোখের আলোয়’, ‘চেনা অচেনায় চীন’, ‘INDIRA GANDHI IN MY EYES’ (ইন্দিরা গান্ধী ইন মাই আই’স) প্রবন্ধ গ্রন্থসহ গল্প ও ফিচার।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ‘চোখের আলোয়’ গ্রন্থে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, তার (শুভ্রা) বয়স তখন ১৪, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বয়স ২২ বছর।

সেই বয়সে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নি। ভারতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তারা।

শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মামাশ্বশুরবাড়ি আমাদের তুলারামপুর গ্রাম।

বিশেষ করে গীতা দিদির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। দিদি তুলারামপুরে থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে যান ভারতে।

কার্তিক বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি।

পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে করে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন গীতা দিদি। তুলারামপুর এলাকার ৯৬ বছরের বায়োবৃদ্ধ এক নারী বলেন, শুভ্রা আমাদের কাছে ‘গীতা’ নামে পরিচিত। নড়াইলের সেই ‘গীতা’ নামের মেয়েটিই ভারতবাসীর কাছে ‘শুভ্রা মুখার্জি’ নামে পরিচিত।

ছোটবেলায় গীতা আমাদের পুকুরে গোসল করতো। সমবয়সীদের সাথে খেলায় মেতে উঠত। বাগানে আম কুড়াতো। নড়াইলের বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, গীতা (শুভ্রা) নিজের মেধা, মনন, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গ্রামের সাধারণ মেয়ে থেকে হয়েছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী।

তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে আজ বিকেলে নড়াইলের তুলারামপুরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।