আবারও ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার

bangladesh bank

একসময় সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ায় সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের ব্যয় মিটে যেত। ফলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের প্রয়োজন হত না।

বরং সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। সাম্প্রতিককালে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং রাজস্ব আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারকে বাধ্য হয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই ও আগস্ট) ঋণ করেছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

তথ্যমতে, গত অর্থবছর সরকারের ঋণ চাহিদা ছিল খুব কম। অর্থবছরের শুরুর দিকে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল বছর শেষে পরিশোধ করে আরও বেশি। অবশ্য শেষ দিকে ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেড়েছিল।

গত অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল। ওই অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। এ সময়ে ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের কোন মাসের সঞ্চয়পত্রের বিক্রির হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক মাসের হিসাব দেখলে বোঝা যায় যে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে।

গত অর্থবছরে ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।

গত অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতদিন সরকারের বাজেট ঘাটতির বড় অংশই জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জোগান হচ্ছিল। ফলে সরকারকে আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার দরকার হচ্ছিল না।

সঞ্চয়পত্রে সরকারকে সুদ বাবদ দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয়। ফলে তাতে সরকারের উপর চাপ বাড়ে। এজন্য সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নেওয়ার জন্য সঞ্চয়পত্রে নানা কড়াকড়ি আরোপ করে।

অন্যদিকে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ঋণ পায় না। ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অর্থ ছাড় করতে সময় লাগে, দৈনন্দিন কাজে অর্থের প্রয়োজন হয়; কিন্তু শুরুতেই আয় হয় না।

তাই সবসময় অর্থবছরের শুরুর দিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ে। বিভিন্ন প্রকল্প ও বরাদ্দের অর্থ পাওয়ার পর সেখান থেকে প্রয়োজন মেটানো ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা হয়, যার ফলে শুরুতে বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে যায়।

তারা জানান, মূলত বড় বড় প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, এলএনজি টার্মিনাল, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতির ফলে সরকারের প্রচুর নগদ অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে।

ব্যাংক থেকে পুরো অর্থবছরে কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে সে বিষয়ে বাজেটে উল্লেখ থাকে। সাধারণত, প্রতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে কমবেশি ঋণ নিয়ে আসছে।

তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে কোন টাকা ঋণ নেয়নি সরকার। ওই অর্থবছরে উল্টো বকেয়া পরিশোধ করেছিল। মূলত, ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থের যোগান আসায় ব্যাংক থেকে সেবছর ঋণ নেয়নি সরকার।