যশোরে গরুর দালাল প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য আটক

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা (পিবিআই) যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া পশুহাট থেকে গরুর দালাল প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছে।

আটককৃতরা হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার খোর্দ্দ গ্রামের শওকত আলী খানের ছেলে লাবলু খান (৩৮) একই গ্রামের মান্নান আলী খানের ছেলে গোলাম আলী (৩২) যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ষাটখালী গ্রামের মৃত শাহাজাহান মোল্লার ছেলে শামসুর রহমান (৫১)

একই উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের নাছিয়ার বিশ্বাসের ছেলে মনিরুল ইসলাম (২৫) ও আব্দুর রহিম খানের ছেলে রইজ হোসেন (২৮)। বাঘারপাড়া ও সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা এলাকা থেকে এদের আটক করা হয়।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে বাঘারপাড়া থানায় প্রতারণা মামলায় রয়েছে। নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের মৃত রতন শেখের ছেলে জাকির শেখ (৪৫) বাদি হয়ে ১৮ অক্টোবর সোমবার মামলা করেন।

পি বি আইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৮ অক্টোবর সোমবার রাত সাড়ে ১১ টায় সাতক্ষীরার খোর্দ্দ গ্রামের বাড়ি থেকে লাবলু খান ও গোলাম আলীকে এবং ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার গভীর রাতে বাঘারপাড়া উপজেলার ষাটখালির বাড়ি থেকে শামসুর রহমান একই উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে মনিরুল ইসলাম ও রইজ হোসেনকে আটক করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই ডিএম নুর জামাল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায় তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। বিভিন্ন পশু হাটে গরু ক্রয় বিক্রয়ের দালালি পেশার পাশাপাশি হাটে আগত সহজ সরল ব্যক্তিদের প্রতারিত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকাল অনুমান ৪ টার সময় মামলার বাদী জাকির শেখ বাড়ীতে পোষা একটি গরু বিক্রয় ও নতুন একটি ভাল জাতের গরু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী সাখাওয়াতকে সাথে নিয়ে যশোরের বাঘারপাড়া ভাঙ্গুড়া নামক গরুর হাটে যায়।

জাকির শেখ বিক্রয়ের জন্য সাখাওয়াতকে তার গরুর কাছে দাঁড় করিয়ে রাখে। সে গরুর হাটে আরেকটি ভাল জাতের গরু কেনার জন্য খোঁজা খুজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে জাকির শেখ একটি গরুর কাছে দাঁড়ায়। সেখানে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন গরু ক্রয় বিক্রয়ের দালাল চক্রের লোক দেখতে পায়।

অভিযুক্ত দালাল প্রতারক চক্রের সদস্যরা জাকির শেখের সরলতার সুযোগে বিভিন্ন ভাবে প্ররোচিত করে হাটের অন্য একটি সাদা কালো রংয়ের গরু এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার টাকায় কিনতে জাকির শেখকে বাধ্য করে। প্রতারক চক্রের এক সদস্য জাকির হোসেনের কাছ থেকে ১২ শ টাকা নিয়ে গরু ক্রয়ের হাসিল (রশিদ) করে।

ওই হাসিলে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় গরুটির দাম নির্ধারণ হয়। হাসিল করে আসার পথে প্রতারক চক্রের ওই সদস্য জাকির শেখের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গরুটির কাছে এসে কৌশলে পালিয়ে যায়। জাকির শেখের কাছ থেকে গরু ক্রয়ের হাসিলটি অভিযুক্ত শামসুর রহমান (৫১) নিজেকে বাজার কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে কৌশলে নিয়ে নেয়।

এরপর জাকিরকে বলে গরু ক্রয়ের ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে আপনি গরু নেন। জাকির শেখের কাছে টাকা না থাকায় প্রতারক চক্রের আরেক পলাতক সদস্য নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের মৃত ফায়েক ভুইয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর ভুইয়ার (৩৮) কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার নিতে বাধ্য করে।

জাকির শেখের ৪৫ হাজার টাকার গরুটি ৪২ হাজার টাকায় বিক্রয় করতে বাধ্য করে। জাকির শেখের গরু বিক্রয়ের ৪২ হাজার টাকা ধার বাবদ নেয়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বাজার করতে আনা ১ হাজার টাকা মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় অভিযুক্তদের পছন্দের সাদা কালো রংয়ের গরু ক্রয় করতে বাধ্য করে।

গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম জানায়, জাকির শেখের কাছে প্রতারনার মাধ্যমে ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় বিক্রয়কৃত গরুটি তারা ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় সাতমাইল বাজার থেকে ক্রয় করেছে বলে স্বীকার করে।

আটককৃতদের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সাইফুদ্দিন হোসাইনের আদালতে মঙ্গলবার ১৯ অক্টোবর হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি দেয়।