আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ

তেল, গ্যাস, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারওপর টানা পরিবহন ধর্মঘটে নাকাল অবস্থা সকলের। গত বৃহস্পতিবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে সরকার।

ফলে ৬৫ টাকার ডিজেলের দাম যেয়ে দাঁড়ায় ৮০ টাকা। এর এক দিন বাদেই লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির দাম সিলিন্ডার প্রতি বাড়ানো হয় ৫৪ টাকা। এতে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩১৩ টাকা।

এক মাসের ব্যবধানে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮০ টাকা। অর্থাৎ এক মাস আগে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ছিলো ১ হাজার ৩৩ টাকা। এদিকে গত প্রায় কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজ, মরিচসহ সবজি, মাছ, মাসেংর দামও তুলনামূলক অনেক বেশী।

হঠাৎ করেই একসাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রিকশা চালক মতিয়ার হোসেন জানান, কোরবানীর সময় বাড়ি থেকে চেয়ে গরুর মাসং খেয়েছিলাম। এরপর এখনও পর্যন্ত তা খেতে পারিনি। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে মাংস খেতে চাইলে পোল্ট্রি কিনে খাওয়াতাম।

১২০-১৩০ টাকার সে পোল্ট্রি এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়। সেটি খাওয়ায় এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ী আদনান সিদ্দিকী বলেন, আগে তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকার মাছ, গোস, সবজি কিনলে ৪ জনের সংসার প্রায় এক মাস চলে যেতো।

কিন্তু এখন ৫ হাজার টাকার বাজার করেও এক মাস যাচ্ছে না। তারওপর দফায় দফায় গ্যাসের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩শ’ টাকা। শহুরে বাসায় গ্যাসের কোন বিকল্প নেই। তাই বাধ্য হয়েই খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও এখন আর পরিবারের সবার মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

চাকুরিজীবী নাজমুল হোসেন জানান, বাজারে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশী। লাউ, কুমড়া, বিভিন্ন ধরণের শাক, মেটে আলু, ওলসহ সব ধরণের সবজির দামই কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ২০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু’তিন মাস ধরেই এসব সবজির দাম বাড়ছে। অন্যদিকে সব ধরণের মাছের দামও চড়া।

সেখানে কেজিতে ৩০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পোল্ট্রি, সোনালী, পাকিস্থানী, দেশী মুরগীতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বেতন বাড়েনি এক টাকাও। আমরা তাহলে কি খেয়ে বাঁচবো? নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার দর আর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা, ঠিক তখন লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে ডিজেল ও পেট্রোলের দাম।

তারওপর অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। পরিবহন শ্রমিক আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেন, লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় কোন আয়ই ছিলো না আমাদের। এসময় সংসার চালাতে যেয়ে লাখখানেক টাকার বেশী দেনা হয়েছি। শুধুমাত্র একদিন ১০ কেজি চাল, ডাল, লবণ আর তেল পেয়েছিলাম।

আবার গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলো। ভাড়া বাড়ুুক বা তেলের দাম কমে যাক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা। কেননা তাতে আমাদের বেতন বাড়বে না। কিন্তু একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। তারওপর সব জিনিসেরই দাম বৃদ্ধি। আমরা কিভাবে চলবো?

যশোর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) জেষ্ঠ্য সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, তেলের মূল্য বৃদ্ধি মানেই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। যা নিত্য দিনের খাবারসহ সব ধরণের উৎপাদনের ওপরই বিরুপ প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই সব জিনিসের দাম বাড়তি।

তারওপর উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে মানুষের না খেয়ে থাকতে হবে। অথবা খেতে পারলেও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার তারা পাবে না। এটা গোটা দেশ বা সমাজ ব্যবস্থাকেই চরম হুমকির মুখে ফেলবে।