যশোরে ২৯০ ক্লিনিকে আছেন মাত্র ৯ প্যাথলজিস্ট

Jessore map

যশোরে মোট ২৯০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিপরীতে প্যাথলজিস্ট আছেন মাত্র ৯ জন। যশোর সদর হাসপাতাল ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কিছু প্রতিষ্ঠানে এসব প্যাথলজিস্টরা নামমাত্র বসলেও, সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই তাদের পদচারণা।

মূলত টেকনিশিয়ানদের দিয়েই চলে সেখানকার পুরো কাজ। এতে রোগীদের মেডিকেল রিপোর্টে মেলে না প্রকৃত তথ্য। যে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ব্যবস্থাপত্র দেয়াও দুরুহ হয়ে পড়ে চিকিৎসকদের জন্য।

অথচ সরকারি নির্দেশনানুযায়ী একটি ক্লিনিক কিম্বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একজন প্যাথলজিস্ট থাকতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ওই একজনের নাম অন্যত্র দিলে আবেদন এক্সেপ্টেবল হবে না।

সুতরাং ওই প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সও পাবে না। সেখানে যশোরে ২৯০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে অনায়াসেই। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ মাঝেমধ্যে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে। কখনও কখনও সিলগালাও করে দেয়। তবে ওই পর্যন্তই।

অজ্ঞাত খুঁটির জোরে কিছুদিন বাদে সেখানে পুনরায় শুরু হয় স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিশেষ করে সদর হাসপাতাল কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগাতেই বিধি বর্হিভূতভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্রমতে, যশোর মেডিকেল কলেজে ৫ জন, সদর হাসপাতালে ১ জন, আদদ্বীন মেডিকেল কলেজে ১ জন এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন ২ জন প্যাথলজিস্ট। কিন্তু জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ২৯০টি। এরমধ্যে ১১০টি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৮০টি।

সরকারি নিয়মানুযায়ী যেখানে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়, সেখানে বাধ্যতামূলক একজন প্যাথলজিস্ট থাকতে হবে। কিন্তু জেলার হাতে গোণা ১৩/১৪টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যগুলোতে পুরোপুরিই উপেক্ষিত হচ্ছে সরকারি নির্দেশনা।

যশোরে সবচেয়ে বেশী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার প্যাডে স্বাক্ষর দেখা যায় ডা. একেএম আব্দুল আওয়ালের। সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে যশোর সদর হাসপাতালের একেবারে সামনেই গড়ে ওঠা ৯টি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সেগুলো হলো অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান, কমটেক, দেশ, ইবনে সিনা, পিয়ারলেস, জনতা, সিটি, ন্যাশনাল প্যাথলজি এন্ড হরমোন কেয়ার সেন্টার। তবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাম থাকলেও সবগুলোতে বসেন না বলে দাবি করেছেন আব্দুল আওয়াল।

এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ডা. হাসান আবদুল্লাহ। যশোর সদর হাসপাতালের এ প্যাথলজিস্ট শহরের ৬টি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। সেগুলো হলো কুইন্স, ল্যাবস্ক্যান, মর্ডান, গ্রিণহার্ট ও প্রাইম।

যার মধ্যে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সদর হাসপাতালের দায়িত্ব শেষে এ ৫টি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি।

যশোর আধুনিক হাসপাতাল, আল্টাভিশন, যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগ দেখেন যশোর মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সীমা সাহা।

তিনি প্যাথলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ না হলেও দেখছেন সে দপ্তরটিই। এছাড়া অর্থোপেডিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন ডা. সম্পূর্ণা সেন, দড়াটানা ও একতা হাসপাতালে আবুল হোসেন প্যাথলজিস্টের দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা প্রাইভেট হাসপাতাল, বন্ধন, সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ বাকি কোন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন প্যাথলজিস্ট নেই। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র টেকনিশিয়ানদের দিয়েই সারছে সকল কাজ। যাদের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

খোদ যশোর সদর হাসপাতালের সামনের প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধেই স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই আবার অধ্যয়নরত অবস্থাতেই করছে চাকুরি।

অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক অসীম সাহা বলেন, হাতেগোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাদে কারোরই নিজস্ব প্যাথলজিস্ট নেই। বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানইতো একই নিয়মে চলে। আমরাও সেভাবে চলি। সমস্যাতো হচ্ছে না।

ল্যাবজোন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমরা টেস্টগুলো করিয়ে রাখি। প্যাথলজিস্ট আসলে তিনি দেখে রিপোর্ট তৈরি করে দেন। তারপর সেগুলো ডেলিভারি দেয়া হয়।

এবিষয়ে আলাপকালে যশোর সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ছোটখাট কিছু বিষয় টেকনিশিয়ান দেখতে পারেন।

তবে এমন অনেক জটিল বিষয় রয়েছে যা প্যাথলজিস্ট ছাড়া সম্ভব নয়। এতে বরংচ হিতে-বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া একজন চিকিৎসক পরীক্ষার ফলের ওপরই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। যদি সেটি সঠিক না হয়, তাহলে তো ভোগান্তী বাড়বেই।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা বিষয়টিকে সামনে রেখে অভিযান শুরু করেছি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।