অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও অভয়নগরের ‘ওভা ফাউন্ডেশন’

যশোরের অভয়নগরে ওভা ফাউন্ডেশন নামে একটি সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সদস্যদের জমানো অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে সমিতির সদস্যরা ওভা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু দাউদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ জাহানারা বেগম ও অফিস সহকারী সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, ২০১০ সালে উপজেলার রাজঘাট মাইলপোস্ট এলাকায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘ওভা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সমিতি ডিপিএস ও মাসিক সঞ্চয় কার্যক্রম চালু করে।

ভবনের মালিক আবু দাউদ সভাপতি, রাজঘাট জাফরপুর এলাকার মো. নুরুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ জাহানারা বেগম ও অফিস সহকারী সেলিনা আক্তার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন।

২০১২ সালে সরকার কর্তৃক ওভা ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন লাভ করে। সমিতির বর্তমান সদস্যসংখ্যা আনুমানিক ৪০০। যাদের জমানো টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন উল্লিখিত চার কর্মকর্তা।

সরেজমিনে রাজঘাট মাইলপোস্ট এলাকায় ওভা ফাউন্ডেশনের অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ভবনের সামনে প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ পাস বই হাতে বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বৃদ্ধা নাছিমা বেগম বলেন, সমিতির শুরু থেকে আমি একজন সদস্য। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক লাখ টাকা জমা হয়েছে। যার প্রমাণ পাস বই। ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়ার কথা থাকলেও কোনো দিন দেয়নি।

মূল টাকা ফিরে পেতে গত এক বছর ধরে ঘোরাঘুরি করছি। বর্তমানে আমার ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। আজ টাকা ফিরিয়ে দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু এসে দেখি অফিস বন্ধ।

সভাপতি-সম্পাদককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানের পাঁচ লাখ টাকা, ঘাট শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক ও আসাদুলের দুই লাখ করে চার লাখ টাকা, সলেমন শেখের দেড় লাখ টাকা,

চাকরিজীবী বাবুল গাজীর তিন লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ বিক্ষুব্ধ সদস্যরা তাদের টাকা ফিরে পেতে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে ওভা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ভবন মালিক আবু দাউদ বলেন, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান আমার ১০ লাখ টাকাসহ সদস্যদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

সভাপতি হিসেবে দায় আমার ওপর এসে পড়েছে। কখন কিভাবে পালিয়ে গেছে তা আমি জানি না। বিক্ষুব্ধ সদস্যদের মধ্যে যারা টাকা পাবে আলোচনার মাধ্যমে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ওভা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

ওভা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামানের রাজঘাট বাজারের ভাড়া বাসায় গেলে বাড়ির মালিক জানান, কয়েক মাস পূর্বে নুরুজ্জামান সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। পরে নুরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অভয়নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন কুমার মণ্ডল মুঠোফোনে জানান, ওভা ফাউন্ডেশন নামে একটি সমিতির চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সদস্যদের টাকা আত্মসাতের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এএসআই তিতাশকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।