যশোরে সুদেকারবারী মনিরা বেগমকে আসামি করে ৭ মামলা

mamla rai

যশোর শহরতলীর খোলাডাঙ্গার সুদে কারবারীর অভিযোগে মনিরা বেগমকে আসামি করে আদালতে সাতটি মামলা হয়েছে। আসামি মনিরা বেগম খোলাডাঙ্গার রবিউল ইসলামের স্ত্রী।

বৃহস্পতিবার খোলাডাঙ্গার মৃত ধনী কর্মকারের স্ত্রী প্রমিলা কর্মকার, মৃত কমল কস্তার স্ত্রী রুপালি কস্তা, শংকর কর্মকারের স্ত্রী রিতা রানী কর্মকতার, রঞ্জনের স্ত্রী ভাদরী রানী, শংকর কর্মকারের স্ত্রী চঞ্চলা কর্মকার, খোকন সরদারের স্ত্রী ইলা সরদার, মৃত নিতাই কর্মকারের স্ত্রী ভুলামনি কর্মকার বাদী হয়ে পৃথক এ মামলা করেছেন।

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন পিবিআইকে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু। তিনি বলেন,সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের নারীদেরকে টার্গেট করে এ ধরণের প্রতারণায় তার মুল টার্গেট। যদিও এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরা বেগম।

মামলার অভিযোগে জানাগেছে, রুপালী কস্তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি টিউশনি করে জীবীকার নির্বাহ করেন। ২০১৮ সালে চেক ও আইডি কার্ড দিয়ে মনিরার কাছথেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। দুই বছরে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। তারপরও মনিরা আরও দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

প্রমিলা কর্মকার ১৫ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন মনিরার কাছ থেকে। এ টাকা বাবদ তাকে ৭০ হাজার টাকা ও সিরিয়াল করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও মনিরা আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে স্টাম্প দিয়ে মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।

ইলা সরদার ২০২৬ সালের ৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য স্ট্যাম্পে লেখাপড়া করে ৩৫ হাজার টাকা নেন মনিরার কাছ থেকে। মুলটাকা পরিশোধ করার পর মনিরা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার কাছ থেকে জোর করে ৮৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া ইলার সিরিয়ালের পাওনা ২৮ টাকা ও স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

চলা কর্মকার শহরের মেসে রান্না করে জীবীকা নির্বাহ করেন। ২০১৫ সালে তিনি মনিরার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০২০ সালে ৬৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। মনিরার কাছে সিরিয়ালের জমা আছে ২২ হাজার টাকা। তারপরও মনিরা দুই লাখ টাকা দাবি করে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

ভাদুরী রানী ২০১৮ সালে মেরে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ৮০ হাজর পরে ৪০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন। এ টাকা পরিশোধ করতে তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে মনিরাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারপরও চেক ফের না দেয়ায় আরও একটি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৭০ হাজর টাকা পরিশোধ করেন।

এরপর আরও টাকা দাবি করে গত ৭ সেপ্টেম্বর মনিরা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভাদুরী রানীর বাড়ি যেয়ে টাকা দাবি করে মারপিট করে জখম করে। ভুলামনি কর্মকার পেশায় শাকপাতা বিক্রেতা। আর্থিক অনাটনের কারণে আট হাজার টাকা নিয়েছিল মনিরার কাছ থেকে। পরে তিনি কিস্তির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এরপর আরও টাকা দাবি করে মনিরা তার বাড়ির জমি লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। জমি লিখে দিতে অস্বীকার করায় বাড়ির আসবাবপত্র ও থালা-বাসন নিয়ে যায় মনিরা।

রিতা রানী কর্মকার একটি এনজিওতে আয়া পদে চাকরি করেন। ২০১৭ সালে তিনি মনিরার কাছে চেক ও জাতীয় পরিচয় পত্র জিম্মায় রেখে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পরে তিনি সুদ আসল দিয়ে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপর আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে মনিরা তাকে হুমকি দিয়ে আসাছিল।

টাকা না দেয়ায় দুইজোড়া কানের দুল ও একটি আংটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় মনিরা। আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু জানান, মনিরা দূর্ধর্ষ প্রতারক ও পেশাদার সুদেকারবারী। সে অভিনব কায়দায় অসয়হায় নির্যাতিত ও সংখ্যালুদের টার্গেট করে প্রথমে লোন দেন।

এরপর টাকার পর টাকা দিলেও তা শোধ হয়না। পরে জমাকৃত চেকদিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতে মামলা করেন।