আমাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়েছিল: গয়েশ্বর

goyeshwar chandra roy

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নানা ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা জানান। শুক্রবার ৩১ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে একাদশ নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮- পর এই তিনটি নির্বাচন তিনটি কৌশলে বৈতরণী পার করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের কৌশলটা আমরা আগে বুঝতে পারিনি।

ওই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের তত্ত্ববাধায়নে ৪০ হাজার ভোট বাক্সে রিজার্ভ রাখা ছিল। আমার জানা মতে, কোন একটি আসনে ৪০ হাজার ভোট ব্যালট বাক্সে রিজার্ভ রাখার পরও সেখানে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে ছিল।

পরে অন্য জেলা থেকে এনে তা পূরণ করা হয়। এ নির্বাচনটা ছিল যারা এক-এগারোতে অন্যায় করেছে, তাদের বেঁচে থাকা এবং শাস্তির আওতায় না আসার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি চুক্তি।

তিনি বলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী মঈন ইউ আহমেদ বা তথাকথিত যে সরকার সেই সরকার নিরঙ্কুষ সংখ্যা গরিষ্ঠতা এনে দেয়। সেই সময় শেখ হাসিনা বিদেশ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, আমি বর্তমান (ওয়ান ইলেভেন) সরকারের সমস্ত কর্মকান্ডের বৈধতা দেব।

ওই সরকারটা ছিল অবৈধ সরকার। এই সরকারের বৈধতা এনে দিতে হলে শেখ হাসিনাকে ২০১ এর অধিক আসন তাকে দিতে হবে।

ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর আরো জানান, একই ধরনের প্রস্তাব আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও দেওয়া হয়েছিল। রাতভর গয়েন্দা সংস্থার লোকজন দুই নেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) সাথেই কথা বলত।

তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার দুটি নাম আছে- একজন হলেন মেজর জেনারেল আমিন, তিনি বিহারী আমিন নামে পরিচিত, ফজলুল কবির বারী তিনি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার।

এক সময় এরা একজন আমাকে হুমকি দিয়ে ক্রসফায়ারের কথা বলছিল। আমি তখন তাকে বলছিলাম কাজটা খুব সহজ, সময় এবং স্থান বলে দিলে আমি আসতে পারি, আমাকে খুঁজতে হবে না।

আমার অপরাধ ছিল বেগম খালেদা জিয়ার একটি বিবৃতি সর্বপ্রথম গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলাম। এটিই ছিল আমার অপরাধ। তিনি আরো জানান, খালেদা জিয়া মুক্তির তিন মাস আগে ব্রিগেডিয়ার বারী অনেক কাকুতি মিনতি করে আমার সাথে বসতে চাইলেন। আমি বসলাম, দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা।

আমার সাথে আরো দুই-একজন ছিল। তাদের প্রস্তাবে যেন খালেদা জিয়া সম্মতি দেয়, সেই জন্য যেন আমি ভূমিকা রাখি। আমি বললাম কীভাবে সম্ভব, আমি তো তার কোন আইনজীবী না, তার কোন আত্মীয় স্বজনও নয়। আমাকে বলা হল, রাত এগারোটার দিকে আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাব।

ম্যাডামকে বোঝান অর্থাৎ তাদের অপকর্মের দায় মুক্তি আরো ইত্যাদি। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবে এবং দেশটাও বাঁচবে। আমি বললাম, এতোদিন পরে উপলব্দিটা হল কেন? আমি তাদের কথা রাজি না হয়ে বললাম, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন,

তারপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সাথে এ-ও বললাম, আপনারা ম্যাডামের সাথে আলোচনা করেন তিনি যদি একটা চিরকুট দেয় অথবা তার পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানের মাধ্যমে খবর পাঠান তাহলে আমি যেতে পারি। তা ছাড়া আমি আপনাদের দালাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারব না।

তিনি খুব রাগ করলেন, আবার ক্রোসফায়ারের ভয় দেখালেন। যাওয়ার আগে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে গেল। আপনার বুঝেন ওয়ান ইলেভেনের চক্রান্তটা কেমন ছিল।