আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়ি: রাষ্ট্রপতি

Abdul Hamid
ফাইল ছবি

সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি মুক্ত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২২ সালের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আসুন লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে দল-মত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান: সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। আমি সরকারি ও বিরোধী দলের সব সদস্যদের এ মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

সরকারি টাকার অপব্যবহার রোধের পরামর্শ: সরকারি অর্থের অপব্যবহার ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ব্যয় বেড়েছে।

কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়ায় সরকারি ব্যয়ও বেড়েছে। এজন্য সরকারি অর্থের অপব্যবহার রোধপূর্বক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সর্বোপরি সরকারি সব কার্যক্রমে জনগণের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে অধিক কার্যকর করতে হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান: ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে,

যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে সে দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ।

জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর তাগিদ: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ জনশক্তি তৈরির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রশিক্ষণ কারিক্যুলাম প্রস্তুত, বিদ্যমান কারিক্যুলাম যুগোপযোগীকরণ এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে সনদপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ: নতুন প্রজন্মকে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আমাদের জনমিতির সুবিধা পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।

এ জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে।

ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ: ওমিক্রন নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েণ্ট ওমিক্রন যাতে আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিগগিরই দেশের অধিকাংশ জনগণ টিকার আওতায় আসবে এমন আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতো মধ্যে ৭ কোটিরও বেশি জনগণকে টিকা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই দেশের বেশিরভাগ জনগণকে টিকার আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ্।

সময় সাশ্রয়ের জন্য মূল ভাষণের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত আকারে সংসদে পাঠ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রায় ৪ হাজার ৭০০ শব্দের সংক্ষিপ্ত ওই ভাষণে কয়েকটি বিষয়ে দিক নির্দেশনার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।