ইভ্যালিকে নিয়ে যে আদেশ দিলো হাইকোর্ট

বহুল আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির ব্যবস্থাপনায় হাইকোর্ট যে পর্ষদ গঠন করেছিলেন, সে পর্ষদকে ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রবিবার (১৬ জানুয়ারি) গত বছরের (২২ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এ সংক্রান্ত আদেশ পরিবর্তন করে এ আদেশ দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদেশে ইভ্যালির ২২টি গাড়ি বিক্রি অথবা ভাড়া দিয়ে যে টাকা আয় হবে তাও কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধানমন্ডিতে ইভ্যালির নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং পাওনাদারদের বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সেই সঙ্গে ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গ্রাহকদের টাকা কোথায় কী বাবদ খরচ করেছেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে  প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। পরিচালনা পর্ষদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোর্শেদ আহেমেদ খান।

আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর আদালত আদেশ দিয়েছিলেন। ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটি আর চালাতে পারছিলেন না।

কারণ কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে, অফিসের ভাড়া দিতে হচ্ছে। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার ওই আদেশটি পরিবর্তন চেয়ে আবেদনে করা হয়েছিল পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে। শুনানি শেষে আদালত ২২ সেপ্টেম্বরের আদেশটি পরিবর্তন করে নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছেন।

ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে এক গ্রাহকের আবেদনে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

আদেশে বলা হয়, বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে ইভ্যালির সম্পদে কেউ হাত দিতে পারবে না। সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, সেই কারণ দর্শাতেও বলা হয়।

ওই মাসের ৩০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ইভ্যালি লিমিটেড, যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,

নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনকারী পক্ষ ফের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আরজি জানালে ইভ্যালির যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট।

সে অনুযায়ী রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস নথি দাখিলকরলে আদালত গত বছর ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে পাঁচ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেন। এ পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে।

পর্ষদে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

এ পর্ষদে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন আছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। এ পর্ষদের আবেদনেই স্থগিতাদেশ পরিবর্তন করে আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।