চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের সন্ধানে ভাবনা

আমি দর্শকদের হতাশ করতে চাই না। চাইলেই বছরে দুই-চারটা ছবি করা যায়। কিন্তু সে পথে হাঁটিনি। আমার লোভ কম। আমার প্রতি দর্শকের আস্থা তৈরি হয়েছে। যত্রতত্র কাজ করে সে জায়গা নষ্ট করার ইচ্ছে নেই।

আমি অপেক্ষা করি ভালো গল্পের জন্য— কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীকে বড়পর্দায় নিয়মিত দেখা না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি এভাবে বললেন।

অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবিতে তাকে দেখা যায় প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। গত ডিসেম্বরে মুক্তি পায় নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। এ ছবিতে ‘পদ্ম’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন তিনি।

তার ভাষ্যে, আমি এ সময়ের নায়িকা। ‘পদ্ম’ চরিত্রে দর্শকের সামনে হাজির হওয়া সহজ ছিল না। তারা আমাকে এ চরিত্রে গ্রহণ করেছেন দারুণভাবে। গুণী ব্যক্তিদের প্রশংসা পেয়েছি। আমি সবসময় অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। তাই যে চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন সে চরিত্রে রূপদান করার চেষ্টা থাকে সবসময়।

ভাবনা সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘দামপাড়া’ ছবির শুটিং। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-এর প্রযোজনায় ছবিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাবনার চরিত্রের নাম ‘মাহমুদা হক’। যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের স্ত্রী।

তার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কাহিনি অবলম্বনে এগিয়েছে ছবির গল্প। শামসুল হকের চরিত্রে অভিনয় করছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আনন জামান। পরিচালনা করছেন শুদ্ধমান চৈতন।

এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ভাবনা বলেন, ‘এ ছবিতে ‘মাহমুদা হক’-এর দুটি বয়স তুলে ধরেছি। একটি হলো চব্বিশ-পঁচিশ বছর। অন্যটি চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর। আমি মাহমুদা আন্টির সাথে অনেক কথা বলেছি। দেখেছি তার সাথে আমার বেশ মিল।

তিনিও বলেছেন। তাই অভিনয় করা সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া প্রশাসনিক সহযোগিতাও পেয়েছি আমরা। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ করার সময় সে অর্থে যা পাইনি। দেখা গেল, শুটিংয়ে সত্তর দশকের পুলিশের গাড়ি দরকার। সেটার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

এরকম নানা বিষয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা ছিল। গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে হলেও ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ থেকে আলাদা। ছবিটির ডাবিং বাকি আছে। এদিকে নাটকের কাজও করছেন ভাবনা। যখন কথা হচ্ছিল তখন তিনি ছুটছেন উত্তরার দিকে।

একটি খন্ড নাটকের শুটিংয়ে যাচ্ছেন। ভাবনা বলেন, আমার কাছে বড়পর্দা ও ছোটপর্দার ভেদাভেদ নেই। গল্প ও চরিত্র ভালো হলে যে কোনো পর্দায় কাজ করতে রাজি। খন্ড নাটকের কাজ করছি নিয়মিত। এখন ধারাবাহিকের কাজ না করলেও সামনে করতে পারি। অভিনয় কখনো ছাড়ব না।

ভাবনা ছবি আঁকেন। তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা অনুসরণ করেন তারা তা জানেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা জানতে চাইলে ভাবনা বলেন, পেইন্টিং নিয়ে পরিকল্পনা আছে। চলতি বছর একটি প্রদর্শনী করার ইচ্ছে আছে।

গত কয়েক বছর ধরে বইমেলায় নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে ভাবনার বই। পাঠকের প্রশংসাও জুটছে লেখিকার জন্য। তবে এবারের বইমেলায় সে ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে। থাকছে না ভাবনার কোনো উপন্যাস।

এর কারণ জানিয়ে ভাবনা বলেন, পড়ালেখা ও অভিনয়ে ব্যস্ততার জন্য লেখালেখিতে সময় দিতে পারিনি। অনলাইনের ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবির জন্যও সময় দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কিছু লেখার সময় হয়ে ওঠেনি।

এদিকে সদ্য শেষ হওয়া অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভাবনা। তিনি বলেন, আমি অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। ভবিষ্যতে নির্বাচন করার ইচ্ছে নেই। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য এখনো হইনি। তাই ওদিকে যাওয়া হয়নি। সূত্র: ইত্তেফাক