ভারত-চীন প্রতিপক্ষ নয় অংশীদার হওয়া উচিত

india china

কিছু শক্তি চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করতে চায়। ভারত ও চীনের পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয় বরং অংশীদার হওয়া উচিত। চীনের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনের ফাঁকে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন ধারা অনুসরণের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, চীন মনে করে, বড় দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুগের দাবি নয়। বিশ্বায়নের যুগে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সঠিকভাবে সহাবস্থান করবে, সেই চিন্তা করা দরকার।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-ভারত সম্পর্কে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এটি চীন ও ভারতের জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে পুরোপুরি অসংগতিপূর্ণ।

তিনি বলেন, ভারত ও চীনের একে অপরের জন্য হুমকি না হওয়া এবং পরস্পরের উন্নয়নের সুযোগে পরিণত হওয়ার কৌশলগত মতৈক্যে অবিচল থাকা উচিত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন আশা করে, দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার সুযোগ বজায় থাকবে এবং ভুল-বোঝাবুঝি এড়ানো যাবে। তিনি বলেন, সবাই স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে, চীন ও ভারতের মতো এক বিলিয়নেরও বেশি লোকসংখ্যার দেশ হিসেবে শুধু স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতায় অবিচল থাকলে নিজেরাই নিজের ভাগ্য গড়তে পারবে এবং সত্যিকারভাবে দেশের উন্নয়ন ও পুনরুত্থান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে সামরিক জোট ন্যাটোর সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংস্করণ বলেও অভিহিত করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল বর্জন করতে অন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় চীন।

তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের সামগ্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এই অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং পরস্পরের লাভের প্রত্যাশার বিপরীতে চলে। তাই এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

ওয়াং ই আরো বলেন, চীন এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার জন্য একটি ‘বড় মঞ্চ’ তৈরি এবং একসঙ্গে এশিয়া-প্যাসিফিক অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করতে চায়।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিসহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ অব্যাহত আছে। চীন এই উদ্যোগ জোরদার করবে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে আরো ১০টি দেশ চীনের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে এই উদ্যোগে অংশ নেওয়া দেশের সংখ্যা ১৮০-তে উন্নীত হলো। চীন ২০টি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে টিকা উৎপাদনে সহযোগিতা করেছে এবং সহযোগিতার ভিত্তি আরো মজবুত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে পাশে চায়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল পর্যালোচনা করার পাশাপাশি নিজের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নির্ধারণ করছে। জাতিসংঘ কাঠামোর বাইরে কোনো ধরনের সামরিক জোটে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান রয়েছে।

গত বছর কোয়াড (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান) সম্প্রসারণ প্রশ্নে চীন বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছিল, সম্প্রসারিত কোয়াডে বাংলাদেশ যোগ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে। বাংলাদেশ ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সহযোগিতা উদ্যোগে যোগ দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরকেন্দ্রিক অঞ্চলকে সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিশীল ভূখণ্ড। এটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দাবার ছক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক মান নির্ধারণকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে অভিহিত করেন ওয়াং ই। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর যে তথাকথিত গণতন্ত্র সম্মেলন করেছে তা গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর আঘাত। আবারও এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা অজনপ্রিয় ব্যাপার হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনের পর পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র তাইওয়ান। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেন ও তাইওয়ান এক বিষয় নয়।

তাই এ দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলে না। তিনি বলেন, তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ বহিরাগত ‘নিষ্ফল আশ্বাসে’র মধ্যে নয়; বরং আন্ত প্রণালি সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ বিকাশ এবং দেশটির পুনর্মিলনের মধ্যে নিহিত। ওয়াং ই বলেন, বিদেশি সমর্থন চাওয়ার দিন শেষ। চীনকে আটকে রাখতে তাইওয়ানকে ব্যবহারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।