সড়কে মৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

world bank

সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমাতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে ব্যাংকটি।

এই অর্থ অনুমোদন করা হয়েছে বলে সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দেশের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক এবং জেলা পর্যায়ের সড়ককে নিরাপদ করতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।

৩০ বছর মেয়াদি এই অর্থায়ন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা থেকে। সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পটি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ সড়কের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এটি বিশ্বব্যাংকের প্রথম ডেডিকেটেড সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প। এই প্রকল্প বাংলাদেশের সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে এবং মৃত্যু কমাতে সাহায্য করবে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গাজীপুর-এলেঙ্গা মহাসড়ক এবং নাটোর-নবাবগঞ্জ মহাসড়ককে বেছে নেওয়া হবে। এই দুই সড়কের নকশা, সড়কে নির্দেশনামূলক চিহ্ন,

জরুরি সেবা, পথচারীদের সুবিধা, গতি নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি সেবা সুবিধা নিয়ে কাজ করা হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে সড়কের উন্নয়ন ঘটানো হলে এই দুই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩০ ভাগ কমে যাবে।

২১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলছে, এই দুটি জাতীয় সড়কের পাশে টোল ফ্রি জরুরি নাম্বারে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হবে।

নির্বাচিত জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে জরুরি সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হবে। চিকিৎসা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করা হবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রকল্পের অধীনে দুর্ঘটনার ডেটাবেস গঠন করা হবে। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হবে।

যানবাহন নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফি সংক্রান্ত নানা তথ্যও ডেটাবেসে একত্রে রাখা হবে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় সচেতনতা বাড়াতে ও পথচারীদের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা চালানো হবে।

প্রকল্পের অধীনে জেলা পর্যায়ের সড়ক উন্নয়নেও নজর দেওয়া হবে। ট্রাফিক পুলিশের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপারকারীদের আচরণে পরিবর্তন আনতে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এজন্য সিসিটিভি, নিয়ন্ত্রক পরিমাপক, ডিজিটাল ডিসপ্লেতে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হবে।আধুনিক সড়ক নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়া হবে। যেখানে পেশাদার চালকদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাকে পঙ্গুত্বের ‘প্রথম কারণ’ ও শিশু মৃত্যুর ‘চতুর্থ কারণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অনিরাপদ ও কম টাকায় বানানো সড়ক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাস্তায় দুই চাকার গাড়িসহ অনুমোদনহীন বাহন অনেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অগ্রাধিকারের বিষয় বলে বিবেচ্য।

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্পটি সাহায্য করবে।

প্রকল্পকাজের দলনেতা ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবহন বিশেষজ্ঞ দীপন বোস বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সেটআপ, আইনি কাঠামো ও মনিটরিং সিস্টেমের যথার্থ সমন্বয় হলে এই প্রকল্প ফলপ্রসূ হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই যৌথ প্রকল্পটিকে সরকারের দেওয়া নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার পূরণের অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক।