বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসাপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা

জাপানকে বাংলাদেশের একটি পরিবার এবং বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সোমবার (১১ এপ্রিল) জাপানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এসব কথা বলেন ড. আবদুল মোমেন।

গত বছরের নভেম্বরে হায়াশি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকটি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে।

মন্ত্রী হায়াশি তার বক্তব্যে ইউক্রেন, উত্তর কোরিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের মনোযোগ ও সহযোগিতা কামনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় এবং যুদ্ধবিরোধী দেশ। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া বা লিবিয়া যেখানেই যুদ্ধ হয় সেখানে জানমালের ক্ষতি হয় যা আমরা ইউক্রেনে প্রত্যক্ষ করছি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন পালনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন দুই দেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা বলেন।

বিশেষ করে ব্লু ইকোনমি, অটোমোবাইলস, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মতো উদীয়মান খাতে জাপানকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

বেশকিছু শিক্ষার্থী এবং পরিশ্রমী তরুণ জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য মোমেনের অনুরোধের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, জাপান মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জাপানের টিকা সহায়তার কথাও স্মরণ করেন যা এখনও পর্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি পরিচালনা করেছে। এছাড়া দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন।

ড. মোমেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভাসানচরে স্বেচ্ছায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরসহ এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ জাপানকে এ ইস্যুতে ধন্যবাদ জানায় কারণ তারা সহায়তা করার পাশাপাশি অনেক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য জাপানের আরও সম্পৃক্ততা চায়।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে কারণ সমস্যা সমাধানে প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মানবিক ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ইউক্রেনে মানবিক প্রবেশাধিকারের জন্য পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশে আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্রের জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করেন। দুই মন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে ভবিষ্যৎ প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা করেন এবং একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, ড. মোমেন কয়েক ঘণ্টার জন্য টোকিওতে ট্রানজিটে রয়েছেন এবং আগামী ১১-১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য মহাসাগর সম্মেলনে অংশ নিতে আজই বিকেলে টোকিও থেকে পালাউয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।