ভোজ্যতেল সংকটে ভুগবে সারা বিশ্ব

হঠাৎ করে পাম অয়েল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বিকল্প পথ না থাকায় বেশি ডলারের বিনিময়ে ভোজ্যতেলের জোগান মেটাতে হচ্ছে তাদের। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভোজ্যতেলের সংকটে ভুগবে সমগ্র বিশ্ব।

একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে সরবরাহ সংকট। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অকস্মাৎ পাম অয়েল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে আমদানিকারক দেশগুলো।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ইন্দোনেশিয়া জানায়, তারা আপাতত আর পাম অয়েল রফতানি করবে না। ঘোষণার পরপরই ভোজ্যতেলের বাজারে দাম বাড়তে শুরু করে।

শুধু পাম অয়েল নয়, বেড়েছে সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষা ও তুষের তেলেরও। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো।

এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের ভোগ্যপণ্য গবেষক জেমস ফ্রাই বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এ সিদ্ধান্ত শুধু পাম অয়েল নয়, সব ধরনের ভেজিটেবল অয়েলে প্রভাব ফেলবে।

ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, নিজ দেশের মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক ভেজিটেবল অয়েলের এক-তৃতীয়াংশ ইন্দোনেশিয়া উৎপাদন করে থাকে।

এর মধ্যে পাম অয়েলের পরিমাণ শতকার ৬০ শতাংশ। কেক তৈরি থেকে শুরু করে রান্না, সাবান তৈরি ও ক্লিনিং পণ্য হিসেবে পাম অয়েল ব্যবহার হয়ে থাকে।

জেমস ফ্রাই বলেন, দক্ষিণ আমেরিকায় খরার কারণে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। কানাডায় সরিষার ফলনে দুর্যোগ দেখা দেওয়ায় সরিষার তেল ও তুষের তেলের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সূর্যমুখী তেল রফতানি একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল। এতে বাজারে ভোজ্যতেলের বড় রকমের সংকট দেখা দিতে পারে।

জরিপে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকট এবং আর্জেন্টিনা ও কানাডায় ভয়াবহ খরার কারণে বিশ্ববাজারে তেল রফতানিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সরবরাহ সংকট।

এ অবস্থায় দেশগুলোর প্রধানতম ভরসাস্থল ছিল ইউক্রেন ও রাশিয়ার সূর্যমুখী তেল। কিন্তু চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু করলে শেষ আশাও মরীচিকার মতো হারিয়ে যায়।

এতে হারাধনের শেষ ছেলের মতো ইন্দোনেশিয়ার কাছে পাম অয়েলের জন্য নির্ভরশীল হতে না হতেই দেশটি থেকে এমন ঘোষণায় হতাশ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫০ শতাংশ পাম অয়েল আমদানি করে। অন্যদিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ৮০ শতাংশ।

পাকিস্তানের ইডিবল অয়েল (ভোজ্যতেল) রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রশিদ জানমোদ বলেন, এ অবস্থার কোনো বিকল্প নেই। ইন্দোনেশিয়ার এ সিদ্ধান্তে প্রতিটি দেশকেই ভুগতে হবে।

ঢাকার তেল শোধনাগার কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তেল রফতানি করবে ইন্দোনেশিয়া। ইতোমধ্যে যে মজুত আছে, তা দিয়ে মে মাসের প্রথমার্ধ চালিয়ে নেওয়া যাবে। তবে সংকট সৃষ্টি হবে দ্বিতীয়ার্ধে।

ইন্দোনেশিয়ার এমন ঘোষণার পরপরই ভারতে পাম অয়েলের দাম ৫ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশের খোলা বাজারে কেজিপ্রতি সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একই অবস্থা বিরাজ করছে পাকিস্তানের বাজারে। সূত্র: রয়টার্স