তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার

sylet bonna

‘এমন পানি এবছর আর চোখে পড়েনি। গত দুদিনে হাজার টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন দিয়ে চরে আমন ধানের চারা রোপণ করার পর হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন (৫৫)। শুধু আফজালই নন, এমন অভিযোগ নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের ১০ হাজার পরিবার। হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট ) সকাল ৯টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আজ সকালে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন।

এদিকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সেখানকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। সেখানে গোবর্দ্ধন এম এইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন হায়দারীয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোমর পরিমাণ পানি হওয়ায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায়ও হাটু পরিমাণ পানি উঠায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বানভাসি মানুষের।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ, এর আগে আর কখনো এমন বন্যা দেখা দেয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবৃদ্ধি এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জি,আর সারোয়ার। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক করার পাশাপাশি সব প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।’