স্ক্যান্ডাল থেকে বের হতে পারছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

gov logo

স্ক্যান্ডাল থেকে বের হতে পারছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একের পর এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।

কাজী আনারকলির মারিজুয়ানাকাণ্ড তার সর্বশেষ সংযোজন। নাইজেরিয়ার বন্ধুর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ মারিজুয়ানাসহ ইন্দোনেশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন আনারকলি।

জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে উপপ্রধান ছিলেন এই নারী কূটনীতিক। ইন্দোনেশিয়ার সরকারের অনুরোধে আনারকলিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ওই নারী কূটনীতিক মাদকাসক্ত। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আনারকলির ঘটনাই শুধু নয়; বিভিন্ন সময়ে আরও অনেক কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। এসব ঘটনার তদন্ত হয়েছে; বিচার হয়েছে। কোনোটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের সার্ভিসের ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনো কোনো ঘটনা আড়াল করেছেন। কেউ কেউ বেঁচে গেছেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে। এতকিছুর পরও কেলেঙ্কারি থামছে না। আনারকলি আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত থাকাকালে গৃহকর্মী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে আসতে হয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে এসব ঘটছে। মিশনগুলোতে নিয়ম-শৃঙ্খলা আনতে গেলেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটে। এটা বন্ধ করতে হবে।

হাসিব আজিজ নামের ফরেন সার্ভিসের এক মেধাবী কর্মকর্তা উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার পর নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই উজবেকিস্তানের এক নারীকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে তার আগের দুই স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ দিলে হাসিব আজিজ চাকরিচ্যুত হন। বাংলাদেশের এক নারী কূটনীতিকের স্বামী নিউইয়র্কে টপলেস বারে মদ্যপ হয়ে এক রাতে দেড় কোটি টাকা বিল দিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছিলেন। সরকার তখন ওই নারী কূটনীতিককে দেশে ফিরিয়ে আনে। ফরেন সার্ভিসের আরেক নারী কূটনীতিককে ঘিরে একজন সাবেক বিশেষ সহকারীর নিউইয়র্কে মারামারির ঘটনায় হইচই হয়েছিল। তাকে তখন দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ফরেন সার্ভিসের এক কর্মকর্তা তার এক নারী সহকর্মীকে গর্ভকালীন অবস্থায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন। ২০১৫ সালে ওই নারী কূটনীতিক বিষয়টি তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের কাছে অভিযোগ দেন। নিপীড়নের জন্য শাস্তির বদলে নারী কর্মকর্তাকেই বরখাস্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সময়ে নারী কর্মকর্তাকে পাগল সাজানোর চেষ্টা হয়।

ভারতের আসামে একজন ভারতীয় নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তদান্তীন অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার কাজী মুনতাসির মোর্শেদের বিরুদ্ধে। কলকাতায় উপদূতাবাসে প্রথম সচিব থাকাকালে সানিউল কাদেরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। তার সঙ্গে কলকাতার আলিশা মাহমুদ নামের এক নারীর ভিডিও চ্যাট ও হোয়াটসঅ্যাপ আলাপ ফাঁস হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। ২০১৪ সালে ইতালির মিলানে ওই সময়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল তাওহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিশনেরই এক নারী সহকর্মী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মারিজুয়ানাকাণ্ডে জড়িত কাজী আনারকলি। ওই সময়ে তিনি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক। তদন্ত কমিটির অপর দুজন সদস্য ছিলেন ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব পবন চৌধুরী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিষ্ণু রায় চৌধুরী।

ফরেন সার্ভিস শুধু নয়; নেপালে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এক রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হয়েও নানা কেলেঙ্কারির জন্ম দেন। দূতাবাসের এক নারী কর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে টোকিও থেকে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত একেএম মুজিবুর রহমানকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

টোকিওর বাংলাদেশ মিশনের সাবেক সোশ্যাল সেক্রেটারি জাপানি তরুণী কিয়োকো তাকাহাসি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স ও ই-মেইলে রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী। ফেসবুকে পরিচয় সূত্রে তিনি প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।