প্রস্তাবেই বেড়ে গেল সয়াবিন তেলের দাম

 

দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর ভোজ্যতেলের বাজারে আবারও ভোক্তাদের ‘পকেট কাটা’ শুরু হয়েছে। বাজারে কয়েকটি কোম্পানির তেলের সরবরাহ এরই মধ্যে কমে গেছে। আবার কিছুসংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ী বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে লিটারে ৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন। একইভাবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে।

 

বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম কমে ১ হাজার ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ ডলারে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠায় সংগঠনটি। তবে এ প্রস্তাবে এখনও সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই মধ্যে খুচরা বাজারে বাড়তি মূল্যে তেল বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে সদাই নিয়ে কাঁঠালবাগানে নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হোসেন। তেলের দামের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নানা অজুহাতে আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের পকেট কাটা শুরু করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৯৪০ টাকা চাইছেন তাঁরা। দরকষাকষি করে ৯২০ টাকায় কিনেছি। অথচ গত সপ্তাহে একই তেল কিনেছি ৮৯০ টাকায়। গতকাল তেজকুনীপাড়া, কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি ব্র্যান্ডের তেলের সরবরাহ একেবারে কম। যেসব ব্র্যান্ডের তেল দেখা গেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই পাঁচ লিটারের বোতল। এ ধরনের বোতলের বিক্রিও বেশি। তবে কিছুটা কম দেখা গেছে এক ও দুই লিটারের বোতল। খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করছেন ৯১০ থেকে ৯২০ টাকায়। বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯১০ টাকা লেখা থাকলেও এত দিন এগুলো কেনা যেত ৮৯০ থেকে ৯০০ টাকায়। সে হিসাবে বোতলের গায়ে লেখা দরের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। একইভাবে এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। এর গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কাছাকাছি জায়গায় ব্যবসা করেন। এ কারণে দোকানের নাম না লেখার অনুরোধ করে এক মুদি দোকানি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দু-একদিন পর থেকেই ডিলাররা তেলের সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন বোতলের গায়ে লেখা দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।

একই বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের এক বিক্রয়কর্মী জানান, দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ড্রাম পাম অয়েলের দাম দুই হাজার টাকা বেড়েছে। এক ড্রামে থাকে ১৮৫ কেজি। সেই হিসাবে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজি পাম অয়েলের দাম। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।

 

রাজধানীর তেজকুনীপাড়া এলাকার মুদি দোকানদার জাহানারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রয়কর্মী জানান, কোম্পানিগুলো দু’দিন ধরে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে; চাহিদামতো দিচ্ছে না। কারওয়ান বাজারের কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, ডিলাররা বোতলের গায়ে লেখা দামেই খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

দাম বাড়ানো হয়নি বলে দাবি করেন কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের ডিলার সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সিদ্দিক। সমকালকে তিনি বলেন, আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। কারও কাছ থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। ডিলারদের কমিশন দিয়েই তেল সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো। বোতলের গায়ের দরে বিক্রি করার সুযোগ তাঁদের নেই। কেউ এ ধরনের অনিয়ম করলে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করছে- এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এদিকে, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা গেছে। গতকাল রাতে বাসাবোর আহমেদবাগে পাঁচটি দোকানে পাওয়া যায়নি সয়াবিন তেল। ওই এলাকার হামিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হামি